অলস ও আয়েশী মানুষদের আইনের উপর নির্ভরতা তাদের মনোবল এবং ভেতরে থাকা প্রতিরোধের শক্তি নষ্ট করে দেয়। কেন এটা হয়? অথচ, আইনের উপরে নির্ভরতা মানুষকে আরো বেশী ডিসিপ্লিনড, আরো বেশী শক্তিশালী করবে সেটা প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু তাকে কেন সেটা আরো দুর্বল করে তুলে?
খেয়াল করলে দেখবেন, সকল মানুষ কিন্তু তার জীবনের সকল সিদ্ধান্ত নিজে নেয় না। “man must by necessity be dominated by someone else.” অর্থ্যাত মানুষের উপর কারো আধিপত্য থাকাটা বিশেষ জরুরী। আমরা দেখি এই আধিপত্য থাকে নেতাদের। নেতারা তাদের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়। তারা মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে। যদি এই domination বা আধিপত্য ন্যায্য ও যথাযত হয়। এবং এর অধীনে মানুষ বিভিন্ন আইন ও বিধিনিষেধের মাধ্যমে নিপীড়িত না হয়। তবে একজন মানুষ তার নিজের মধ্যকার যে সুপ্ত সাহস বা কাপুরুষতা রয়েছে তার দ্বারা স্বাচ্ছন্দ্যে পরিচালিত হতে পারে। যেকোন ধরনের নিয়ন্ত্রণকারী ক্ষমতার অনুপস্থিতি বা the absence of any restraining power এর অনুপস্থিতেও সে সন্তুষ্ট থাকে। এমতাবস্থায় নিজের উপর আস্থা, স্বনির্ভরতা বা Self-reliance একসময় তার কাছে স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। কিন্তু বিপরীতে যদি সে আধিপত্যটা হিংস্র ও ভীতিকর হয়। তখন তা মানুষের মধ্যে থাকা সকল মনোবল ভেঙে দেয়। তাদের মধ্যকার প্রতিরোধের শক্তি ভেঙে দেয়। ফলশ্রুতিতে, নিপীড়নের শিকার লোকদের মধ্যে নিস্ক্রিয়তা তৈরি হয়।
আইনের উপর নির্ভরতা।
যখন আইনকে নীপিড়নের হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করা হয় তখন তা একজন মানুষের মধ্যকার মনোবলকে সম্পূর্নরুপে ধ্বংস করে দেয়। কারন এমন কেউ যে নিজেকে ডিফেন্ড করতে পারে না, তার বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবহার, সেই ব্যক্তির মধ্যে অপমান বা হিউমিলিয়েইশনের অনুভূতি তৈরি করে। আর নিঃসন্দেহে তা সেই ব্যাক্তির মধ্যকার মনোবলকে ভেঙে দেয়।
শিক্ষাক্ষেত্রে একই বিষয় পরিলক্ষিত হয়। দেখা যায় শিক্ষার স্বার্থে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও এর আনুষাঙ্গগীক নির্দেশাবলী মানার জন্য বিভিন্ন আইন-কানুন তৈরি করা হয়। এবং শৈশব থেকেই এসব প্রয়োগ করা হতে থাকে। তখন সেসব আইনের কিছুটা হলেও একই প্রভাব থাকে। কারণ মানুষ এমতাবস্থায় ভয় ও কর্তব্যনিষ্ট হয়ে বেড়ে ওঠে। ফলস্বরূপ তারা তাদের নিজস্ব মনোবলের উপর আর নির্ভর করতে পারে না। “Thus, greater fortitude is found among the savage Arab Bedouins than among people who are subject to laws.” এজন্য বেদুইন আরবদের মধ্যে সর্বোচ্ছ মনোবল দেখতে পাওয়া যায়। ভারত উপমহাদেশেও পাঠান ও পশতুনদের মধ্যে এই মনোবল দেখতে পাওয়া যায়। এইসব এলাকার ভৌগলিক অবস্থা ও তাদের অবস্থানের রিমোটনেসের প্রভাবে এটা হয়ে থাকে।
এজন্য, যারা আইনের উপর ভরসা করে বসে থাকেন। প্রাথমিক জীবন থেকেই শিক্ষাক্ষেত্রে, শিল্প-কারখানায়, বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এইসব আইন, নিয়ম কানুনের উপর পুরোপুরি নির্ভর করে থাকেন। তারা তাদের মধ্যকার মনোবল অনেকাংশেই হারিয়ে ফেলেন। প্রতিকূল ও বিশৃংখল পরিস্থিতিতে তারা নিজেদেরকে কালেভদ্রে হেফাজত করতে পারেন। ছাত্র-শিক্ষক যাদের পেশা পড়ালেখা করা, শিক্ষাদান করা কিংবা ধর্মীয় নেতা, ইমাম যারা বিভিন্ন প্রকার নিয়ম কানুন হরদম মেনে চলেন, তাদের অবস্থা এমনই। লক্ষনীয় যে, তাদের কাছে বিপ্লব আশা করা সঠিক হবে না। বিপ্লবের জন্য যে বিদ্রোহী মনোবল সেটা তাদের মধ্যে অবশিষ্ট নেই। এই বিষয়টা এবং এটি কিভাবে প্রতিরোধের শক্তি এবং মনোবলকে ধ্বংস করে দেয় সেটা উপলব্দি করা আমাদের জন্য বেশ জরুরী।
সন্দেহ নেই, রাসূল সাঃ এর সাহাবারা ধর্মীয় আইন মেনে চলেছিলেন। তারপরেও তাদের মনোবলে কোন কমতি ছিল না। হ্রাসও পায় নি। বরং সম্ভাব্য সর্বোচ্ছ মনোবল তারা ধারণ করতেন। মুসলমানরা যখন রাসূল সাঃ এর কাছ থেকে দ্বীন ইসলাম পেয়েছিলেন, তখন কোর’আনের আদেশ নিষেধ থেকেই তারা তাদের মনোবল পেয়েছিলেন। তাদের মধ্যকার মনোবলকে ইসলাম আরো জাগিয়ে তুলেছিল। কারন আইন এসেছিল সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে। গতানুগতিক কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে নয়। এবং সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা মানুষের ভালোমন্দের ব্যাপারে অবগত। রাসূল সাঃ এর মাধ্যমে পাওয়া ইসলামিক আইন তাই তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে আমলে পরিণত করেছিলেন। কিন্তু ধর্মের প্রভাব আস্তে আস্তে হ্রাস পাওয়ার কারণে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণমূলক আইন ব্যবহারে এসেছিল। ইসলামী আইন-কানুন শিক্ষা একটি শিল্পে পরিণত হল। জ্ঞান আহরণের অংশ হিসেবে তা প্রচলিত বিভিন্ন নিয়ম কানুনের আওতায় শিক্ষাদান শুরু হল। মানুষ নাগরিক জীবনে অভ্যস্ত হতে শুরু করলো। তারা আইনের প্রতি আজ্ঞাবহতার বৈশিষ্ট্য ধারণ করে অনুগত নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠে। এভাবে তাদের মনোবল হ্রাস পেতে থাকে। “Clearly, then, governmental and educational laws destroy fortitude, because their restraining influence is something that comes from outside. The religious laws, on the other hand, do not destroy fortitude, because their restraining influence is something inherent.” স্পষ্টতই, আমরা দেখতে পাচ্ছি, সরকারী এবং শিক্ষা সংক্রান্ত আইনগুলি মনোবল ধ্বংস করে দেয়। কারণ এসব সংস্থার নিয়ন্ত্রণমূলক প্রভাব বহিরাগত, প্রাকৃতিক নয়। অন্যদিকে, ইসলামী আইন মনোবল ধ্বংস করে না। কারণ এর মধ্যকার নিয়ন্ত্রণকারী প্রভাব প্রাকৃতিক।
অতএব, সরকারী এবং শিক্ষা সংক্রান্ত আইনগুলি শহুরে আয়েশী লোকদের এমনভাবে প্রভাবিত করে ফেলে যে, তাদের আত্মা দুর্বল হয়ে যায়। মনোবল, স্পৃহা, অধ্যবসায় ধ্বংস করে দেয়। কারন শিশুকাল থেকে নিয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরেও তাদেরকে এসব আইনের নিয়ন্ত্রনাধীন থাকতে হয়। অনেক মাদ্রাসায় নিয়ম করা হয়েছে, মাথার চুল মুন্ডাতে হবে। জিজ্ঞেস করলে উত্তর পাওয়া যায়, যে ছাত্রের মধ্যে যাতে বিদ্রোহের মানসিকতা জাগ্রত না হয়। সেটার প্রতিরোধে সতর্কতা মূলক এই ব্যাবস্থা নেয়া হয়। একটি প্রতিষ্টান যখন শিক্ষা বিতরণের পূর্বে এমন শর্ত জুড়ে দেয়, বুঝাই যায়, এসব আইন একজন ছাত্রের সকল প্রকারের মনোবল স্বাভাবিক ভাবেই ভেঙে দেয়ার জন্য বা দেয়।
অন্যদিকে বেদুইন ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসরত মানুষের অবস্থা ভিন্ন হয়। কারণ তারা সরকারী আইন, নির্দেশ ও শিক্ষা ব্যাবস্থার আওতা থেকে অনেক দূরে অবস্থান করেন।
কিছুদিন আগে LADbible TV নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত একটি সাক্ষাতকারে আফগানিস্তানে সাবেক আল কায়েদা সদস্য ও পরে বৃটিশ স্পাই আইমান দ্বীন বলেন “আফগানে এসে সকল টেকনোলজি, ইন্টারনেট কানেকশন ভেঙে পড়তো। কোন ইনফোরমেশন শেয়ার করতে হলে একজনকে সেখান থেকে বের হয়ে বা চিঠির মাধ্যমে আদান প্রদান করতে হত”। সন্দেহ নেই আফগানিস্তান তার ভৌগলিক কারনে অত্যন্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত। বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর মূল ভুখন্ড থেকে অনেক দূরে এর অবস্থান। এটা অন্যতম একটি কারণ কেন পরাশক্তি বারবার এসে আফগানে ভেঙে পড়ে।
যাক, মানুষের রচিত আইন শুধুই মানুষকে শৃংখলিত করে। মানুষের মধ্যকার সুপ্ত ন্যাচারাল কোয়ালিটিকে প্রস্ফুটিত হতে দেয় না। তাকে একজন ভেজা, নুয়ে পড়া, সিস্টেমের অনুগত দাস বানিয়ে তুলে। কিন্তু যখনই মানুষ মানুষের আইনকে দূরে নিক্ষেপ করে। ও সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ ত’য়ালার আইনের অধীন হয়ে যায়, তখনই সে প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ পায়। তার মনুষ্য ফিতরাহ জেগে উঠে। (চলবে...।)
কুরবানি, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও বিধান। মুফতি শরীফ মোহাম্মদ সাঈদ
লন্ডনে সিম্পল রিজনের অফিস পরিদর্শন করলেন মুফতি সাইফুল ইসলাম
লিডসে শায়েখে বাঘা রহঃ-এর জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
লন্ডনের সভায় আলেমরা বি এ এস বি কমপ্লেক্সকে সহযোগিতার আহবান জানালেন।
বইঃ বশীর আহমদ শায়খে বাঘা রহঃ
বার্মিংহামে শায়েখে বাঘা রহঃ জীবন ও কর্ম শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত
বায়রাক্তার টিবি২ দীপ্তিমান করছে তুরস্কের ভাগ্য
জার্মানিতে বছরে শতাধিক মসজিদে হামলা; উদ্বিগ্ন মুসলিমরা
বুজুর্গ উমেদ খাঁ। চট্টগ্রাম পুনরুদ্ধারের মহানায়ক!
ডুরান্ড লাইন! পাক - আফগান দ্বন্দ্বের রেড লাইন!
ত্রিপুরা ও বাংলার ঐতিহাসিক সম্পর্ক | পর্ব ২
ত্রিপুরার সাথে ইসলাম এবং বাংলাদেশের সহস্র বছরের যোগসূত্রের সন্ধানে!
পূর্ব আফ্রিকায় পর্তুগিজ উপনিবেশ স্থাপন, শোষণ ও ফলাফল
আফ্রিকার বুকে পর্তুগীজ কলোনি স্থাপনের ইতিহাস।
ইউরোপ থেকে ভারতবর্ষের অবিচ্ছিন্ন জলপথ আবিষ্কার।
কুরবানি, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও বিধান। মুফতি শরীফ মোহাম্মদ সাঈদ
লন্ডনে সিম্পল রিজনের অফিস পরিদর্শন করলেন মুফতি সাইফুল ইসলাম
লিডসে শায়েখে বাঘা রহঃ-এর জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
লন্ডনের সভায় আলেমরা বি এ এস বি কমপ্লেক্সকে সহযোগিতার আহবান জানালেন।
বইঃ বশীর আহমদ শায়খে বাঘা রহঃ
বার্মিংহামে শায়েখে বাঘা রহঃ জীবন ও কর্ম শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত
বায়রাক্তার টিবি২ দীপ্তিমান করছে তুরস্কের ভাগ্য
জার্মানিতে বছরে শতাধিক মসজিদে হামলা; উদ্বিগ্ন মুসলিমরা
বুজুর্গ উমেদ খাঁ। চট্টগ্রাম পুনরুদ্ধারের মহানায়ক!
ডুরান্ড লাইন! পাক - আফগান দ্বন্দ্বের রেড লাইন!
ত্রিপুরা ও বাংলার ঐতিহাসিক সম্পর্ক | পর্ব ২
ত্রিপুরার সাথে ইসলাম এবং বাংলাদেশের সহস্র বছরের যোগসূত্রের সন্ধানে!
পূর্ব আফ্রিকায় পর্তুগিজ উপনিবেশ স্থাপন, শোষণ ও ফলাফল
আফ্রিকার বুকে পর্তুগীজ কলোনি স্থাপনের ইতিহাস।
ইউরোপ থেকে ভারতবর্ষের অবিচ্ছিন্ন জলপথ আবিষ্কার।