সর্বশেষ
  কুরবানি, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও বিধান। মুফতি শরীফ মোহাম্মদ সাঈদ   লন্ডনে সিম্পল রিজনের অফিস পরিদর্শন করলেন মুফতি সাইফুল ইসলাম   লিডসে শায়েখে বাঘা রহঃ-এর জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত   বার্মিংহামে শায়েখে বাঘা রহঃ জীবন ও কর্ম শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত   লন্ডনের সভায় আলেমরা বি এ এস বি কমপ্লেক্সকে সহযোগিতার আহবান জানালেন।   বইঃ বশীর আহমদ শায়খে বাঘা রহঃ   বায়রাক্তার টিবি২ দীপ্তিমান করছে তুরস্কের ভাগ্য   জার্মানিতে বছরে শতাধিক মসজিদে হামলা; উদ্বিগ্ন মুসলিমরা   বুজুর্গ উমেদ খাঁ। চট্টগ্রাম পুনরুদ্ধারের মহানায়ক!   ডুরান্ড লাইন! পাক - আফগান দ্বন্দ্বের রেড লাইন!   ত্রিপুরা ও বাংলার ঐতিহাসিক সম্পর্ক | পর্ব ২   ত্রিপুরার সাথে ইসলাম এবং বাংলাদেশের সহস্র বছরের যোগসূত্রের সন্ধানে!   আসামের বর্তমান পরিস্থিতি!   আসামে ইসলামের আগমন ও এন আর সি ক্রাইসিস।   নবাব নুর উদ্দিন মুহাম্মদ বাকের জং। ইতিহাসে ঠাঁই না পাওয়া বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব!   প্রাক-ইসলামিক আরব। ধর্ম, সমাজ ও সংস্কৃতি।   ইউরোপ থেকে ভারতবর্ষের অবিচ্ছিন্ন জলপথ আবিষ্কার।   আফ্রিকার বুকে পর্তুগীজ কলোনি স্থাপনের ইতিহাস।   পূর্ব আফ্রিকায় পর্তুগিজ উপনিবেশ স্থাপন, শোষণ ও ফলাফল   ধর্ষণের আলামত যেভাবে পরীক্ষা করা হয়।   মেটাভার্স   বাংলাদেশের সাথে সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে চায় তুরস্ক   লিবারেলিজম।   ইউরোপে ইসলাম বিদ্বেষের উত্থান।    পাকিস্তানে ইসলামী দল, তেহরিক-ই-লাব্বাইক নিষিদ্ধের ঘোষণা।   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব- ১১। নেতৃত্বের যোগ্যতা ও ব্যর্থ নেতৃত্ব।   ২০২০ সালের দিল্লি সহিংসতা ছিল একটি সংগঠিত, পরিকল্পিত ‘প্রোগ্রাম’। এবং কেন?   দ্যা রুম হোয়ার ইট হ্যাপেনড। বই রিভিউ। পর্ব-৭   দ্যা রুম হোয়ার ইট হ্যাপেনড। বই রিভিউ। পর্ব-৬   দ্যা রুম হোয়ার ইট হ্যাপেনড। বই রিভিউ। পর্ব-৫   ২০০২ সালের গুজরাট গণহত্যা ও নরেন্দ্র মোদি   দ্যা রুম হোয়ার ইট হ্যাপেনড। বই রিভিউ। পর্ব-৪   দ্যা রুম হোয়ার ইট হ্যাপেনড। বই রিভিউ। পর্ব-৩   দ্যা রুম হোয়ার ইট হ্যাপেনড। বই রিভিউ। পর্ব-২   দ্যা রুম হোয়ার ইট হ্যাপেনড। বই রিভিউ। পর্ব-১   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব- ১০   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব-৯   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব-৮   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব-৭   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব-৬   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব-৫   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব-৪   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব-৩   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব-২   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব-১   রিবা নির্মূল হতে পারে সীরাতের পন্থায়!   ১৯৯১ সালে কাশ্মীরের কুনান ও পোশপোরায় গণধর্ষণ। আজও বিচার হয়নি।   নজরদারি: ‘দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত’   ব্যবসার সঙ্গে অন্য সংস্কৃতিকে যুক্ত করার এজেন্ডা!

ইউরোপ থেকে ভারতবর্ষের অবিচ্ছিন্ন জলপথ আবিষ্কার।

১২ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:৫৪ অপরাহ্ণ

    শেয়ার করুন

সাইফুদ্দীন আহমদ।

ইউরোপ থেকে ভারতবর্ষের অবিচ্ছিন্ন জলপথ আবিষ্কার! সূচনা হলো প্রাচ্যের বুকে ইউরোপীয় কলোনিজম।

বাণিজ্যিক প্রয়োজনে ইউরোপীয় বণিকরা প্রাচীনকাল থেকেই ভারতবর্ষ ও চীনে যাতায়াত করতো। কিন্তু ইসলামের আবির্ভাবের বেশ কিছু সময় পর ইউরোপ থেকে ভারতবর্ষে যাওয়ার সকল জলপথ মুসলমানদের অধিকারে চলে আসে। আর এতে মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হয় ইউরোপীয় বণিক সম্প্রদায় এবং বণিকদের উপর নির্ভরশীল পুরো ইউরোপীয় জনগোষ্ঠী।

কেপ অফ গুড হোপ তথা আফ্রিকার উপকূল ঘুরে আসার পথটা আবিষ্কার হওয়ার আগ পর্যন্ত ইউরোপ থেকে এশিয়া গমনের একটা মাত্র রুট ছিলো। আর সেই রুটটার মধ্যে ছিলো তিনটা বৃহৎ সাগর।

১)ভূমধ্যসাগর ;
২)লোহিত সাগর;
৩) ভারত মহাসাগরের অন্তর্গত আরব সাগর;

মধ্যযুগের পুরোটা সময় এই তিন সাগর এবং তার পাশ্ববর্তী গুরুত্বপূর্ণ সব শহর - বন্দরের চাবিকাঠি ছিলো মুসলিম শাসকদের হাতে। যেমনঃ ভূমধ্যসাগরের পাশ্ববর্তী সাইপ্রাস, আলেকজেন্দ্রিয়া,বৈরুত বন্দর; লোহিত সাগরের পাশ্ববর্তী সুয়াকিন, আকাবা, মোগাদিসু বন্দর; আরব সাগরের পাশ্ববর্তী এডেন, মাসকট সহ সমস্ত বন্দর ও নৌপথ মুসলিম শাসকদের নিয়ন্ত্রণে ছিলো পুরো মধ্যযুগকালীন। এই সময়ে একটা পিঁপড়েও এই পথ পাড়ি দিতে পারতো না মুসলিম শাসকদের অনুমতি ছাড়া!

উসমানীয় শাসনের আগে এই পুরো জলপথ মুসলিম শাসকদের হাতে থাকলেও একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকারের অনুপস্থিতিতে এবং বিভিন্ন মুসলিম সালতানাতের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কোনোমতে সাগর পথে বাণিজ্য করতে পারতো ইউরোপীয়রা।

কিন্তু ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষ বছরে জন্ম নেওয়া উসমানীয় সাম্রাজ্যের উত্থান ইউরোপীয়দের ভারত অভিমুখী বাণিজ্যকে একটা সময় পর হুমকির মুখে ফেলে দেয়। ১৪০০ সালের মধ্যেই মোটামুটি ভূমধ্যসাগর ও লোহিত সাগরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় শক্তিশালী উসমানীয় নৌ বাহিনী।

শক্তিশালী উসমানীয় নৌ বাহিনীর দাপটের কারণে ইউরোপীয় দেশগুলোর ক্রমশই ভূমধ্যসাগর - লোহিত সাগর - আরব সাগর রুট দিয়ে ভারতবর্ষে গমনে নানারকম বাঁধা বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়। ইউরোপ হতে ভারতবর্ষে যাওয়ার পথে কমবেশি ২০ টি বন্দরে নোঙর করতে হতো ইউরোপীয় বণিকদের নৌযান গুলিকে। আর প্রতিটা বন্দরেই মুসলিম প্রশাসকদের বাণিজ্যিক নিয়মে উচ্চহারে শুল্ক (কর) দিতে হতো ইউরোপীয় বণিকদের।

এছাড়াও মিসরের বুকে ১৫২০ সাল অবধি বজায় ছিলো মামলুক সালতানাত। মামলুক ও উসমানীয়দের মধ্যে পারষ্পরিক সদ্ভাব ছিলো না। এতে দেখা যেতো একই জাহাজ থেকে একবার ট্যাক্স নিতো উসমানীয়রা তো আরেকবার নিতো মামলুকেরা। এতে করে ইউরোপীয়দের বাণিজ্যে মুনাফা কমে আসে।

উচ্চ শুল্কের পাশাপাশি উসমানীয় নৌবাহিনীর ঘন ঘন চেকিং এর কারণে ইউরোপীয় বণিকদের জন্য এই বাণিজ্য রুটটি ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে । অপরদিকে ভারতবর্ষের সাথে বাণিজ্য করাটাও অপরিহার্য ছিলো ইউরোপীয়দের জন্য।

ইউরোপে পশুর মাংস খাদ্য হিসেবে সংরক্ষণের কাজে লবণ, জায়ফল এবং লবঙ্গ জাতীয় প্রচুর মশলার দরকার পড়তো কেননা তখনও ফ্রিজ আবিষ্কার হয়নি)। মশলার খনি ভারতবর্ষের সাথে তাই যেকোনো উপায়ে যোগাযোগ রাখতে হতো ইউরোপীয়দের (যদিও মশলার আসল আবাদ ছিলো ইন্দোনেশিয়াতে। কিন্তু আরব ও ভারতীয় বণিকরা ইন্দোনেশিয়া হতে এই মসলা ভারতবর্ষে এনে ইউরোপীয়দের কাছে বিক্রি করতো। এতে ইউরোপীয়রা মনে করতো সব মশলাই ভারতের!) আবার এদিকে এড়াতে হবে ভূমধ্যসাগর - লোহিত সাগর - আরব সাগরের উসমানীয় প্রভাবিত সমুদ্রসীমা।

কথায় আছে প্রয়োজনীয়তাই উদ্ভাবনের জনক!

ইউরোপীয় বণিকরা ভারতবর্ষের সাথে নতুন বাণিজ্য রুট খোঁজার জন্য তাই উঠেপড়ে নেমে পড়লেন। আফ্রিকাকে পাশে রেখে আটলান্টিকের বুক চিড়ে নেমে পড়লো সহস্র ইউরোপীয় রণতরী। লক্ষ্য পূর্ব দিকে অবস্থিত ভারতবর্ষে পৌঁছা! যেথায় তাদের জন্য অপেক্ষা করছে রাশি রাশি মনি মুক্তো!

‌ভারতবর্ষ গমনের নতুন সমুদ্র রুট আবিষ্কার করতে গিয়ে ১৪৯২ সালে কিং ফার্ডিনাড এবং রানী ইসাবেলার পৃষ্ঠপোষকতায়  (স্পেনিশ মুর মুসলমানদের সহায়তায়) ক্রিস্টোফার কলম্বাস পৌঁছে যান আমেরিকা মহাদেশে। আমেরিকায় নামার পর কলম্বাস মনে করেন তিনি ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জতেই এসেছেন। আর তাই তিনি অঞ্চলটির নাম দেন "ওয়েস্ট ইন্ডিজ"। অবশ্য পরে কলম্বাস তার ভুল বুঝেন এবং ভুল অভিযান  পরিচালনার জন্য বাকিজীবন তাকে চারদিক থেকে ভৎসনা শুনে যেতে হয়।(যদিও পরবর্তীতে স্পেনের জন্য আমেরিকা আশীর্বাদ হয়ে উঠে )

স্প্যানিশরা পশ্চিম বরাবর অভিযান পরিচালনা করে ভারতবর্ষের নৌ রুট আবিষ্কারে ব্যর্থ হলেও ঠিক একইসময় আফ্রিকাকে পাশে রেখে দক্ষিণ বরাবর নৌ অভিযান পরিচালনা করে সফলতার মুখ দেখে পর্তুগিজ নাবিকরা।

বলে রাখা ভালো, ১৪৫০ সালের পর থেকেই পর্তুগিজরা আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল বরাবর নৌ রুটের অনুসন্ধান কাজ শুরু করে। তারা এসময় অনুসন্ধান কার্যের সুবিধার জন্য পশ্চিম আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করতে থাকে। পাশাপাশি তারা পশ্চিম আফ্রিকার অভ্যন্তরে মরুভূমির মধ্য দিয়ে ট্রান্স-সাহারান বাণিজ্য রুট দিয়ে স্বর্ণ ও আফ্রিকান দাস ব্যবসা শুরু করে।

পঞ্চদশ শতকের শেষ কয়েকদশক ধরে ধারাবাহিক পর্তুগিজ অভিযান চলতে থাকে পশ্চিম আফ্রিকা থেকে ভারতবর্ষে যাওয়ার রুট অনুসন্ধানে। এমনই একটি অভিযানে ডায়োগো কায়ো নামক এক পর্তুগিজ নাবিক ১৪৮৩ সালে কঙ্গো নদীর মুখ অতিক্রম করেন। কঙ্গো নদী যদিও আফ্রিকার সর্ব দক্ষিণ প্রান্ত নয়,কিন্তু এর আগে এতদূর অবধি কোনো ইউরোপীয় নাবিক পৌঁছাতে সক্ষম না হওয়ায় এই আবিষ্কারের গুরুত্ব ছিলো অপরিসীম!

এরপর ১৪৮৬ সালে আফ্রিকার সর্ব দক্ষিণ অঞ্চল অতিক্রম করে বার্থোলোমু ডায়াস নামক পর্তুগিজ নাবিক। তিনিই প্রথম ইউরোপীয়ান যিনি আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলে ভ্রমণ করেন। তিনি ১৪৮৮ সালে মোসেল বে নামক স্থানে পৌঁছান এবং সেখান থেকে পর্তুগাল ফেরার পথে প্রথমবারের মতো কেপ উপদ্বীপটি দেখেন। (উল্লেখ্য কেপ উপদ্বীপটি আফ্রিকার সর্ব দক্ষিণ অঞ্চল।

তবে ডায়াসের জাহাজগুলি কেপ উপদ্বীপে এসে খারাপ আবহাওয়ার কারণে নষ্ট হয়ে পড়ায় ডায়াসকে নানাবিধ দুর্ভোগে পড়তে হয়। এজন্য নাবিক ডায়াস এই অঞ্চলটির নামকরণ করেন "কেপ অফ স্টর্মস"!

কিন্তু সাধারণ জনগণের জন্য যা দুর্ভোগ রাজা বাদশাদের জন্য তা হলো খুশি ও আনন্দের খবর!

পর্তুগালের রাজা দ্বিতীয় জন যখন নাবিক ডায়াসের দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ প্রান্ত আবিষ্কারের  সংবাদ শুনেন তিনি তখন খুব খুশী হন। আর তাই তিনি নাবিক ডায়াস কর্তৃক নামকরণকৃত অঞ্চলটির নাম " কেপ অফ স্টর্মস " থেকে পরিবর্তন করে " কেপ অফ গুড হোপ " নামকরণ করেন।

অবশেষে_সফলতাঃ

১৪৯৭ সালের শেষ দিকে, পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো দ্য গামা পূর্ববর্তী অভিযানকারী নাবিক ডায়াস প্রদত্ত সামুদ্রিক চার্ট ব্যবহার করে কেপ অফ গুড হোপের আশেপাশ বরাবর সমুদ্র যাত্রা করেন। তিনি আফ্রিকার পূর্ব উপকূল বরাবর বেশ কয়েকটি স্থানে থামলেন।

আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলীয় মালিন্দির বন্দরে তিনি একজন অভিজ্ঞ আরব নৌ-চালক ইবনে মজিদকে পেয়ে যান।আর এই (হতভাগা!) ইবনে মাজিদই ভাস্কো দ্যা গামাকে দেখিয়ে এবং পৌঁছিয়ে দেন ভারতবর্ষে যাওয়ার নৌ রুট। আরব নাবিক মাজিদের সহায়তায় ১৪৯৮ সালের ২০ই মে ভারতবর্ষের কালিকট বন্দরে এসে পৌঁছায় মিস্টার ভাস্কো দ্যা গামা! পর্তুগালের রাজধানী লিসবন থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ অপ গুড হোফ হয়ে ভারতবর্ষের কালিকট বন্দরের এই যাত্রাপথে ভাস্কো দা গামার সময় লাগে ৩০৯ দিন। অবশ্য কারো কারো মতে, ভাস্কো দা গামার আগে আরো কিছু পর্তুগিজ গোয়েন্দা এই রুটটি আবিষ্কার করে। কিন্তু তাদের পরিচয় সঙ্গতকারণে পর্তুগিজরা গোপন রাখে।

সেই যে ভাস্কো দা গামার সাহায্যে ১৪৯৮ সালে পর্তুগিজরা তাদের উপনিবেশ স্থাপন শুরু করে প্রাচ্যের মধ্যে, তার ব্যাপ্তি ছিলো প্রায় ৫০০ বছর। ১৯৯৯ সালে ম্যাকাও নামক চীনা  অঞ্চলটি পর্তুগীজ কলোনি থেকে মুক্ত হওয়ার মাধ্যমে প্রাচ্যের বুক থেকে পরিসমাপ্তি ঘটে পর্তুগীজ কলোনিজমের।

পনেরোশ শতাব্দী শেষ হতে না হতেই ইউরোপের গরীব একটা রাষ্ট্র থেকে দ্রুতই সমৃদ্ধশালী একটি সাম্রাজে পরিণত হয় পর্তুগাল। কারণ ভাস্কো দা গামার নতুন রুট আবিষ্কার করার পর এশিয়া থেকে ইউরোপের সকল বাণিজ্য তখন পর্তুগিজদের হাতে চলে আসে। আগে এই রুটের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিলো আরব বণিকদের হাতে। কিন্তু ভূমধ্যসাগর এবং লোহিত সাগরকে পাশ কাটিয়ে নব আবিষ্কৃত আফ্রিকার দক্ষিণ উপকূলের রুটে পর্তুগিজ আধিপত্য কে চ্যালেঞ্জ জানানোর শক্তি আরবদের ছিলো না।

ভারত মহাসাগরের বাণিজ্যে পর্তুগিজদের এই একক মনোপলি প্রায় শত বছর বজায় ছিলো। এরপরে অন্যান্য ইউরোপীয় শক্তি এসে এতে ভাগ বসায়। অবশ্য এরই আগে পর্তুগীজরা যথেষ্ট আয় করতে সক্ষম হয় এই রুটের বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে। যেমনঃ ভাস্কো দা গামা তার প্রথমবারের বাণিজ্য যাত্রায় যত টাকা ইনভেস্ট করেছিলেন, তার ১৬ গুণ আয় তিনি করেন বাণিজ্যের মাধ্যমে।

দিগ্বিদিক সমুদ্রজয়ের সেই ইউরোপীয় রেঁনেসাতে যে শুধু কলম্বাস অথবা ভাস্কো দ্যা গামার মতো গুটিকয়েক নাবিক অভিযান পরিচালনা করেন তা নয়। বরং ইউরোপের প্রতিটি দেশ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে নাবিক ছুটতে থাকে আটলান্টিকের জলরাশি ভেদ করে।

ব্রিটিশ রাজা সপ্তম হেনরি ইংরেজ নাবিক জন কেবট'কে প্রাচ্যের দিকে যাওয়ার জন্য রুট আবিষ্কার করার জন্য দায়িত্ব দেন। বিখ্যাত এই নাবিক ১৪৯৭ সালে নিউফাউন্ডল্যান্ড এবং নোভা স্কোটিয়া জয় করেন।

প্রায় একই সময়ে ( ১৪৯৭ সালে ) আমেরিগো ভেসপুচি আবিষ্কার করেন তার ভাষায় " একটি নতুন ওয়ার্ল্ড "! যা মূলত বর্তমান সাউথ আমেরিকা কে নির্দেশ করে। চারিদিক হতে ইউরোপীয় নাবিকদের এই নব নব ভূখণ্ড আবিষ্কার মূলত ইউরোপকে ষোড়শ এবং সপ্তদশ  শতাব্দী জুড়ে নব নব উপনিবেশ স্থাপনে সহায়তা করে।

তবে এশিয়া এবং আফ্রিকার উপকূল এবং সমুদ্রপথে পুরো ষোড়শ শতাব্দী ( ১৫০১ থেকে ১৬০০ সাল) জুড়ে পর্তুগীজদেরই একাধিপত্য বজায় ছিলো। অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলো আসার আগ পর্যন্ত, পর্তুগিজরা একচেটিয়া এই সমুদ্রপথের নিয়ন্ত্রণকারী ছিলো।

ভারতবর্ষে পর্তুগীজ তান্ডব!

ভাস্কো দা গামার ভারতবর্ষে আগমনের পরপরই ১৫০০ সালে আরেক পর্তুগিজ নাবিক পেড্রো আলভারেস কাবরাল আগমন করেন ভারতের দক্ষিণের মালাবার উপকূলের কালিকট বন্দরে। কিন্তু স্থানীয় আরব ব্যাবসায়ীরা পূর্ব থেকেই পর্তুগিজদের দস্যুবৃত্তি মনোভাব সম্পর্কে অবগত হওয়ায় সেখানকার রাজাকে অনুরোধ করে পর্তুগিজদের বাণিজ্য করার অনুমতি না দিতে। কিন্তু কালিকট অঞ্চলের তৎকালীন রাজা জামেরিন শুনেননি আরব বণিকদের সতর্ক বার্তা। তিনি বাণিজ্য করার অনুমতি দান করেন পর্তুগিজদের।

বছর না ঘুরতেই পর্তুগিজ নাবিক ও বণিকদের কার্যক্রমে বিরক্ত হয়ে উঠে স্থানীয় অধিবাসীরা। আর তাই স্থানীয় মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে কালিকটের রাজাও পর্তুগিজদের চলে যাবার নির্দেশ দান করে। এভাবে বিতাড়িত করায় ক্ষিপ্ত হয়ে পর্তুগিজরা ভারত মহাসাগরের কিছু আরব জাহাজে আক্রমণ চালায় এবং ৬০০ জনকে হত্যা করে। পর্তুগিজদের এমন আচরণ স্থানীয় মানুষকে করে তোলে বিক্ষুব্ধ। তারা বুঝে, এই অপশক্তি সহজে বিতাড়িত হবার নয়।

পর্তুগিজদের সবচেয়ে নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞ সংগঠিত হয় ১৫০২ সালে। ভাস্কো দা গামার নেতৃত্বে ভারত মহাসাগরে মক্কাগামী প্রায় ২৫০ জন মুসলিম পূর্ণার্থীকে হত্যা করে পর্তুগীজরা। এভাবে প্রতিনিয়ত লুটতরাজ এবং হত্যাযজ্ঞ চালানোর মধ্য দিয়ে ভারতীয় উপকূলের ত্রাসে পরিণত হয় পর্তুগীজ যোদ্ধারা।

পর্তুগীজদের দ্বারা হজযাত্রীদের ডুবিয়ে মারা, আরব - ভারত জলপথে লুটতরাজ বজায় রাখার খবরে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে সেসময়কার মক্কা মদিনার রক্ষক মামলুক শাসকেরা। পর্তুগীজদের হাত থেকে ভারতবর্ষের মানুষদের বাঁচাতে এবং ভারত - আরব বাণিজ্য রুট নিরাপদ করতে সেসময়কার মিশর শাসনকারী মামলুকরা নড়েচড়ে বসে। তারা ১৫০৭ সালে সুদূর মিশর থেকে নৌবাহিনী পাঠায় ভারতবর্ষের উপকূলীয় অঞ্চল গুজরাটের সুলতানকে সাহায্য করতে। মিশরীয় বাহিনীর সহায়তায় পর্তুগীজদের কালিকট বন্দর এবং গুজরাট উপকূল থেকে হটানো সম্ভব হয়। তবে ভারতবর্ষের কোচিন অঞ্চলে পর্তুগীজ ঘাঁটি দখল করা সম্ভব হয়নি মিশরীয়দের দ্বারা।

কিন্তু ধূর্ত পর্তুগীজরা কৌশলে মিশরীয় বাহিনীর সাথে গুজরাটের সুলতানের বিরোধ বাঁধিয়ে দেয়। ফলশ্রুতিতে মিশরীয় বহর পুরোপুরি পর্তুগিজদের দমন না করে মিশরে ফেরত যায়। এরপরই পর্তুগীজরা ভারতের উপকূলীয় বেশকিছু অঞ্চলে নিজেদের স্থায়ী ঘাঁটি গড়তে সক্ষম হয়।

১৫১০ সালের মধ্যে ভারতবর্ষের গোয়া এবং ইন্দোচীনের মালাক্কা সম্পূর্ণভাবে পর্তুগীজ দখলভুক্ত হয়। গোয়া মসজিদসমূহ জ্বালিয়ে এবং স্থানীয় মুসলমানদের হত্যা করে আরবের বুকে ক্রুসেডের হারের প্রতিশোধ নেয় পর্তুগীজরা। সূচনা করে নতুন ইতিহাস। যেই ইতিহাস সমৃদ্ধ ভারতবর্ষের ভঙ্গুর হওয়ার ইতিহাস। যে ইতিহাস লুটপাট আর দস্যুতাকারী ইউরোপীয়দের সভ্য হওয়ার ইতিহাস!

মূলত ভারতবর্ষের নৌরুট আবিষ্কার করতে গিয়ে পর্তুগীজরা অভিযান শুরু করলেও মাঝপথে তারা পেয়ে যায় আফ্রিকার বিস্তীর্ণ ভূমি। আর তাই পর্তুগীজদের চোখ ভারতবর্ষ ও ভারত মহাসাগরে আধিপত্যের পাশাপাশি গিয়ে পড়ে আফ্রিকার দেশগুলোর উপর। ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যেই আফ্রিকার উপকূলীয় কয়েকটি অঞ্চল নিজেদের করায়ত্ত করে নেয় পর্তুগীজরা। আমাদের দ্বিতীয় পর্ব থাকবে ভারত আগমনের পথে আফ্রিকার বুকে স্থাপনকারী পর্তুগীজ কলোনি নিয়ে।

 

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

কুরবানি, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও বিধান। মুফতি শরীফ মোহাম্মদ সাঈদ

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

লন্ডনে সিম্পল রিজনের অফিস পরিদর্শন করলেন মুফতি সাইফুল ইসলাম

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

লিডসে শায়েখে বাঘা রহঃ-এর জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

লন্ডনের সভায় আলেমরা বি এ এস বি কমপ্লেক্সকে সহযোগিতার আহবান জানালেন।

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

বইঃ বশীর আহমদ শায়খে বাঘা রহঃ

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

বার্মিংহামে শায়েখে বাঘা রহঃ জীবন ও কর্ম শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

বায়রাক্তার টিবি২ দীপ্তিমান করছে তুরস্কের ভাগ্য

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

জার্মানিতে বছরে শতাধিক মসজিদে হামলা; উদ্বিগ্ন মুসলিমরা

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

বুজুর্গ উমেদ খাঁ। চট্টগ্রাম পুনরুদ্ধারের মহানায়ক!

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

ডুরান্ড লাইন! পাক - আফগান দ্বন্দ্বের রেড লাইন!

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

ত্রিপুরা ও বাংলার ঐতিহাসিক সম্পর্ক | পর্ব ২

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

ত্রিপুরার সাথে ইসলাম এবং বাংলাদেশের সহস্র বছরের যোগসূত্রের সন্ধানে!

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

পূর্ব আফ্রিকায় পর্তুগিজ উপনিবেশ স্থাপন, শোষণ ও ফলাফল

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

আফ্রিকার বুকে পর্তুগীজ কলোনি স্থাপনের ইতিহাস।

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

ইউরোপ থেকে ভারতবর্ষের অবিচ্ছিন্ন জলপথ আবিষ্কার।

the global affairs google play logo the global affairs apple logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ হোসাইন আহমদ

info@theglobalaffairs.info