সর্বশেষ
  কুরবানি, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও বিধান। মুফতি শরীফ মোহাম্মদ সাঈদ   লন্ডনে সিম্পল রিজনের অফিস পরিদর্শন করলেন মুফতি সাইফুল ইসলাম   লিডসে শায়েখে বাঘা রহঃ-এর জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত   বার্মিংহামে শায়েখে বাঘা রহঃ জীবন ও কর্ম শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত   লন্ডনের সভায় আলেমরা বি এ এস বি কমপ্লেক্সকে সহযোগিতার আহবান জানালেন।   বইঃ বশীর আহমদ শায়খে বাঘা রহঃ   বায়রাক্তার টিবি২ দীপ্তিমান করছে তুরস্কের ভাগ্য   জার্মানিতে বছরে শতাধিক মসজিদে হামলা; উদ্বিগ্ন মুসলিমরা   বুজুর্গ উমেদ খাঁ। চট্টগ্রাম পুনরুদ্ধারের মহানায়ক!   ডুরান্ড লাইন! পাক - আফগান দ্বন্দ্বের রেড লাইন!   ত্রিপুরা ও বাংলার ঐতিহাসিক সম্পর্ক | পর্ব ২   ত্রিপুরার সাথে ইসলাম এবং বাংলাদেশের সহস্র বছরের যোগসূত্রের সন্ধানে!   আসামের বর্তমান পরিস্থিতি!   আসামে ইসলামের আগমন ও এন আর সি ক্রাইসিস।   নবাব নুর উদ্দিন মুহাম্মদ বাকের জং। ইতিহাসে ঠাঁই না পাওয়া বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব!   প্রাক-ইসলামিক আরব। ধর্ম, সমাজ ও সংস্কৃতি।   ইউরোপ থেকে ভারতবর্ষের অবিচ্ছিন্ন জলপথ আবিষ্কার।   আফ্রিকার বুকে পর্তুগীজ কলোনি স্থাপনের ইতিহাস।   পূর্ব আফ্রিকায় পর্তুগিজ উপনিবেশ স্থাপন, শোষণ ও ফলাফল   ধর্ষণের আলামত যেভাবে পরীক্ষা করা হয়।   মেটাভার্স   বাংলাদেশের সাথে সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে চায় তুরস্ক   লিবারেলিজম।   ইউরোপে ইসলাম বিদ্বেষের উত্থান।    পাকিস্তানে ইসলামী দল, তেহরিক-ই-লাব্বাইক নিষিদ্ধের ঘোষণা।   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব- ১১। নেতৃত্বের যোগ্যতা ও ব্যর্থ নেতৃত্ব।   ২০২০ সালের দিল্লি সহিংসতা ছিল একটি সংগঠিত, পরিকল্পিত ‘প্রোগ্রাম’। এবং কেন?   দ্যা রুম হোয়ার ইট হ্যাপেনড। বই রিভিউ। পর্ব-৭   দ্যা রুম হোয়ার ইট হ্যাপেনড। বই রিভিউ। পর্ব-৬   দ্যা রুম হোয়ার ইট হ্যাপেনড। বই রিভিউ। পর্ব-৫   ২০০২ সালের গুজরাট গণহত্যা ও নরেন্দ্র মোদি   দ্যা রুম হোয়ার ইট হ্যাপেনড। বই রিভিউ। পর্ব-৪   দ্যা রুম হোয়ার ইট হ্যাপেনড। বই রিভিউ। পর্ব-৩   দ্যা রুম হোয়ার ইট হ্যাপেনড। বই রিভিউ। পর্ব-২   দ্যা রুম হোয়ার ইট হ্যাপেনড। বই রিভিউ। পর্ব-১   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব- ১০   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব-৯   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব-৮   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব-৭   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব-৬   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব-৫   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব-৪   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব-৩   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব-২   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব-১   রিবা নির্মূল হতে পারে সীরাতের পন্থায়!   ১৯৯১ সালে কাশ্মীরের কুনান ও পোশপোরায় গণধর্ষণ। আজও বিচার হয়নি।   নজরদারি: ‘দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত’   ব্যবসার সঙ্গে অন্য সংস্কৃতিকে যুক্ত করার এজেন্ডা!

ডুরান্ড লাইন! পাক - আফগান দ্বন্দ্বের রেড লাইন!

২১ জানুয়ারি ২০২২ ০৪:২৯ অপরাহ্ণ

    শেয়ার করুন

সাইফুদ্দীন আহমদ

সুপ্রাচীনকাল থেকে ভারতবর্ষের সীমানা মূলত সিন্ধু নদের মাধ্যমেই চিহ্নিত। আরব এবং পারসিয়ানদের চোখে সিন্ধের অপরপারের লোকদের ফার্সি উচ্চারণে হিন্দ নামে অভিহিত করা হতো। আর সেই থেকে হিন্দুস্তান হলো ভারতের নাম।

সিন্ধ যেহেতু ভারতবর্ষের পশ্চিম সীমানা হিসেবে চিহ্নিত, সেহেতু ভারতবর্ষ থেকে সৃষ্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রের সীমানাও হওয়া উচিত সিন্ধু নদ। কিন্তু পাকিস্তানের মানচিত্রের দিকে তাকালে দেখা যায়, প্রাকৃতিক বর্ডার সিন্ধু নদ পাকিস্তানের মাঝ বরাবর প্রবাহিত হয়ে দেশটিকে দুইভাগে ভাগ করেছে মাত্র। অর্থাৎ পাকিস্তান রাষ্ট্রের সীমানা সিন্ধু নদ পেরিয়ে আরো পশ্চিমে প্রসারিত হয়েছে। কিন্তু ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে তো এটা হওয়ার কথা না! তাহলে এই বর্ধিত সীমান্ত কিভাবে পাকিস্তান অর্জন করলো?

রুশ - ব্রিটিশ 'গ্রেট গেইম' পাল্টে দেয় আফগান মানচিত্র!

ঊনবিংশ শতাব্দীর সময়কালে ভারতবর্ষে বিরাজমান ছিলো ব্রিটিশ রাজ। অপরদিকে ব্রিটিশ রাজের তৎকালীন প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়াও তার সাম্রাজ্য বিস্তৃত করতে করতে ধীরে ধীরে ভারতবর্ষের সন্নিকটে এসে হাজির হয়।

ব্রিটিশরা মূলত সমুদ্রপথের মাধ্যমে ভারতবর্ষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতো। অপরদিকে ঐতিহাসিক ভাবে ভালো সমুদ্র সংযোগ না থাকায় রাশিয়া সবসময় স্থলপথেই শক্তি বৃদ্ধি করে প্রভাব তৈরিতে মনোযোগী ছিলো। এরই ধারাবাহিকতায় রুশ বাহিনী ককেশাস, মধ্য এশিয়া পাড়ি দিয়ে চোখ রেখেছিলো আফগানিস্তানের দিকে। যার পরবর্তী লক্ষ্য আরব সাগর ছুঁয়ে একদিকে আরব আর অপরদিকে ভারতবর্ষ নিয়ন্ত্রণ করা।

রুশদের এমন সম্প্রসারণে কার্যত ভীত হয়ে পড়ে ব্রিটিশ রাজ। ব্রিটিশরা আশংকা করে একবার যদি রুশরা আফগানিস্তান করায়ত্ত করতে পারে, তাহলে সরাসরি আরব সাগরের সংযোগ পাবে রুশরা ( তৎকালীন আফগান রাজ্যের সীমানা আরব সাগর অবধি বিস্তৃত ছিলো )। আর এতে করে ভারতবর্ষ এবং আরব উপকূলের ব্রিটিশ রাজত্ব এবং বাণিজ্যে ভাগ বসাবে রুশরা। রুশদের এমন আগ্রাসন ঠেকাতে তাই আটঘাট বেঁধে মাঠে নামে ব্রিটিশ রাজ।

ভারতবর্ষের বহু অঞ্চল জয় করার পর ১৮৪০ এর দশকে প্রথমবারের মতো আফগানিস্তান জয় করার চেষ্টা করেও পরাজয় বরণ করে ফিরে আসে ব্রিটিশরা। এরপর আফগানিস্তানের দিকে আর দীর্ঘদিন চোখ দেয়নি সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটেন।

কিন্তু ১৮৮০ এর দশকে জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি ব্রিটিশদের বাধ্য করে আবার আফগানিস্তানে আক্রমণ চালাতে। কারণ, রুশ সাম্রাজ্য তখন পৌঁছে গেছে আফগানিস্তানের সন্নিকটে। পাশাপাশি আফগান আমীরও ব্রিটিশদের তুলনায় রুশদের সাথে অধিক বন্ধুত্ব বজায় রেখে চলছেন। সব দিক মিলিয়ে ভারতবর্ষ এবং আরবে প্রভাব বজায় রাখতে আফগানিস্তানের সিন্ধু নদ সংলগ্ন অংশে প্রভাব বজায় রাখা একান্তই জরুরি হয়ে পড়ে ব্রিটিশ রাজের।

এমনই জটিল সমীকরণ মাথায় রেখে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় বারের মতো যুদ্ধে নামে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য। অদম্য আফগানরা এবার সীমিত আকারে পরাজিত হয়। যুদ্ধ শেষে আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে ব্রিটিশরা সম্মত হলেও আফগান পররাষ্ট্র নীতি ব্রিটিশমুখী করার শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। অর্থাৎ আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ নীতিতে হস্তক্ষেপ করা না হলেও আফগানিস্তানের আন্তর্জাতিক পলিসি ব্রিটিশদের নির্ধারিত কায়দায় বাস্তবায়ন করার শর্ত মেনে নিতে হয় আফগানদের।

ব্রিটিশরা আফগান সিংহাসন দখল না করলেও আফগানিস্তানের পূর্ব দিকের বিরাট ভূখণ্ড নিজেদের কব্জায় নিয়ে আনে। যুদ্ধ শেষে সমুদ্র সংলগ্ন আফগানিস্তানের অংশ এবং সিন্ধু নদের তীরবর্তী অংশগুলো ব্রিটিশদের অধীনে চলে যায়। যার ফলে পশতুন অঞ্চল ও দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে ব্রিটিশ ভারত এবং আফগানিস্তানের মাঝে। ভারতবর্ষের সীমানা গিয়ে সিন্ধু নদ থেকে পর্যবসিত হয় কৃত্রিম ডুরান্ড লাইনে।

ব্রিটিশ অফিসার ডুরান্ড কর্তৃক আফগানিস্তান এবং ভারতবর্ষের মাঝে প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ টানা লাইনটিই চিহ্নিত হয় আফগানিস্তান এবং ভারতবর্ষের চূড়ান্ত সীমানা হিসেবে। ১৮৯৩ সালে ব্রিটিশ রাজ এবং তৎকালীন আফগান আমীরের মধ্যে সম্পাদিত এক চুক্তির মাধ্যমে কার্যকর হয় লাইনটি।

ডুরান্ড লাইন কার্যকর হওয়ার ফলে ব্রিটিশ রাজের সীমান্তে রুশদের নিশ্বাস ফেলার সম্ভাবনা একদমই শেষ হয়ে যায়। অপরদিকে আফগানিস্তান হয়ে উঠে ব্রিটিশ ভারত এবং রুশ সাম্রাজ্যের মধ্যবর্তী বাফার রাষ্ট্র!  আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণে থাকা ওয়াগন করিডর নামক এক চিলতে ভূমি ঠেকিয়ে রাখে চিরবৈরী ব্রিটিশ ও রুশদের সংঘাতকে।

ব্রিটিশদের আফগানিস্তানের অংশবিশেষ দখল করার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিলো, রাশিয়া যদি আফগানিস্তান কখনো দখলও করে তাহলে যেনো সমুদ্র সংযোগ না পায়। কারণ যুদ্ধ শেষে ভাগবাটোয়ারাতে আফগানিস্তানকে সমুদ্র বিহীন করে তোলে ব্রিটিশ রাজ। পরবর্তীতে এই সমুদ্র বিহীন আফগানিস্তান দখল করতে অবশ্য আর অগ্রসর ও হয়নি রুশ সরকার! কিন্তু ব্রিটিশ কর্তৃক আফগানিস্তানের সমুদ্র সংলগ্ন ভূখণ্ড দখল করা না হলে, রুশরা হয়তো সমুদ্র লাভের আশায় আফগানিস্তানে আক্রমণ চালাতো। তখন হয়তো পুরা দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসই বদলে যেতো!

আফগান আমীরকে যুদ্ধে পরাস্ত করে সিন্ধু নদের পশ্চিম অংশ নিজের সাম্রাজ্যভুক্ত করার এই অসম চুক্তিটি সম্পাদন করে ব্রিটিশ সরকার। কিন্তু ১৯২০ এর দশকে তৃতীয় ইঙ্গ - আফগান যুদ্ধে জয়লাভের পর আফগানিস্তান সম্পূর্ণ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। আর তখন থেকেই দেশটি বারেবারে  তার হারানো ভূখণ্ডের উপর দাবি জানিয়ে এসেছে। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার এবং তার উত্তরাধিকার পাকিস্তান কখনোই এই দাবি নিয়ে কর্ণপাতও করেনি।

১৯৪৭ সালের পর ডুরান্ড লাইনের উত্তরাধিকারী পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির বর্তমান ৪ টি প্রদেশের ২ টিই সে লাভ করেছে ডুরান্ড লাইনের সৌজন্যে। অর্থাৎ পাকিস্তানের সিন্ধু এবং পাঞ্জাব প্রদেশ নিয়ে আফগানিস্তানের কোনো দাবি না থাকলেও বেলুচিস্তান এবং উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশকে এখনো নিজেদের অংশ মনে করে আফগানিস্তান!

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান তার স্বাধীনতা লাভের সময় জাতিসংঘে একমাত্র বিরোধিতার সম্মুখীন হয় আফগানিস্তানের নিকট থেকে! ডুরাল্ড লাইনকে সীমানা মেনে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রকে জাতিসংঘে অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করে আফগানরা।

পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঠেকাতে না পারলেও ডুরাল্ড লাইন কেন্দ্রীক পশতুন বিদ্রোহীদের সবসময় মদদ দিয়ে এসেছে আফগানিস্তানের তৎকালীন সরকারগুলো। পশতুন বিদ্রোহীরা চাইতো পাকিস্তানের পশতুন অধ্যুষিত উত্তরাঞ্চললীয় অঞ্চল নিয়ে আলাদা পশতুনিস্তান ( পাখতুনিস্তান) গঠন করতে।

আলাদা পশতুনিস্তান ( পাখতুনিস্তান ) একসময় আফগানিস্তানে যোগদান করবে এমন সুধারণা রেখেই সেসময় পশতুন বিদ্রোহীদের সবরকম সহায়তা দিতো আফগান সরকার। আর এজন্য ৬০ এর দশকে আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্ক একদম তলানিতে পৌঁছে। দুইবার দেশ দুইটির দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়।

ডুরান্ড লাইন নিয়ে আজ অবধি সমঝোতায় আসতে সক্ষম হয়নি দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই মুসলিম রাষ্ট্র! একদিকে পাকিস্তান এই কৃত্রিম লাইনকেই সীমারেখা হিসেবে বিবেচনা করে আসছে এবং এটা নিয়ে আফগানদের কোনো আবদার তারা শুনতেও রাজি নয়। অপরদিকে আফগানদের মতে পাকিস্তানের চলে যাওয়া উচিত সিন্ধু নদের ঐপারে!

পরষ্পরবিরোধী এমন দাবির মুখে বারেবারে জাতিগত সংঘাতে উত্তপ্ত হয়েছে ডুরান্ড লাইনের দুইধারে বসবাসকারী পশতুন জাতিগোষ্ঠী!

পশতুন জাতিগোষ্ঠীকে দুইভাগে বিভক্ত করেছে এই কৃত্রিম লাইন। অথচ পশতুনদের মধ্যে নেই কোনো সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিভেদ। বাঙলা ভাগ যেমন কৃত্রিম লাইনের মাধ্যমে করা হয়েছে, ডুরাল্ড লাইনের মাধ্যমে পশতুনদের ভূমিও কৃত্রিম ভাবে খন্ডিত হয়েছে। যদিও বাঙলা ভাগে ধর্ম একটা ফ্যক্টর ছিলো, কিন্তু ডুরান্ড লাইনে একমাত্র ব্রিটিশ স্বার্থ ছাড়া আর কোনো ফ্যক্টর ছিলো না!

ডুরান্ড লাইন ঘিরে বর্তমান পরিস্থিতি কেমন?

পেশোয়ার, খাইবার, সোয়াত, চিত্রাল, ওয়ারিজিস্তানের মতো আজন্ম পশতুন ভূমিকে আফগানিস্তান থেকে কেড়ে নিয়েছে এই ডুরান্ড লাইন। স্বাভাবিকভাবেই কোনো আফগান নাগরিক এই ডুরান্ড লাইনকে মানতে পারে না। সাবেক আফগান ভাইস প্রেসিডেন্ট আমীর সালেহের ভাষায়, মৃত্যুর পরেও একজন আফগানের স্বপ্ন থাকবে ডুরাল্ড লাইনের বিনাশ যেনো হয়!

অপরদিকে পাকিস্তান রাষ্ট্র সবসময় চেয়ে এসেছে, ডুরাল্ড লাইনের কার্যকারীতা বজায় রাখার জন্য। আফগানিস্তানে শক্তিশালী ও স্বকীয় শাসকগোষ্ঠী থাকলে পাকিস্তান তার সার্বভৌমত্ব নিয়ে সর্বদাই বিচলিত থাকবে। আর তাই পাকিস্তানের বেশিরভাগ প্রশাসক চেয়ে এসেছে, আফগানিস্তান যাতে সবসময় অস্থিতিশীল থাকে।

কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান কখনোই তার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের আশংকা করে না৷ কারণ ভারত তার অধিকৃত কাশ্মীর নিয়েই সন্তুষ্ট, ভারত কখনোই পাকিস্তানি কাশ্মীরের দিকে অভিযান করবে না। কিন্তু অপরদিকে সব আফগান শাসকেরই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি থাকে, কিভাবে অতিক্রম করা যায় ডুরাল্ড লাইন! কি করে পেশোয়ারকে করা যায় আফগানিস্তানের শীতকালীন রাজধানী!

আফগানিস্তান নামক রাষ্ট্রটি গত চার দশক এত এত অস্থিতিশীলতার মধ্য দিয়ে গিয়েছে যে, ডুরান্ড লাইনের কথা শক্তভাবে তোলারই অবকাশ পায়নি দেশটি। কিন্তু আফগানের বর্তমান সরকার যদি স্থিতিশীল হতে পারে, তাহলে অবশ্যই ডুরাল্ড লাইন নিয়ে কথা তোলা হবে। আর তাই স্থিতিশীল আফগান সরকার ভীষণভাবে ভোগাবে পাকিস্তান রাষ্ট্রকে!

পাকিস্তানের চিরবৈরী রাষ্ট্র ভারতও এমন সুযোগ লুফে নিতে দেরি করেনি কখনো। ডুরাল্ড লাইন ইস্যুতে ভারত সবসময়ই পশতুন জাতীয়তাবাদী তথা আফগান সরকারের পক্ষ হয়েই পরোক্ষভাবে কথা বলে এসেছে।

ডুরাল্ড লাইন কর্তৃক দুই ভাগে বিভক্ত পশতুন জনগোষ্ঠী কি চায়?

জাতিগতভাবে বিশ্বের ২৬ তম জনগোষ্ঠী হিসেবে বিবেচিত পশতুন সম্প্রদায়। আফগানিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী সম্প্রদায় হলো এই পশতুন সম্প্রদায়। পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ১৬% হলো এই পশতুনরা। পশতুন জাতিগোষ্ঠী আমাদের কাছে পরিচিত পাঠান নামে। সাহসে, সততায় অনন্য এই পাঠানদের নিয়ে সৈয়দ মুজতবা আলীর লিখনী বা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাবুলিওয়ালা বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদও বটে !

কৃত্রিম ডুরান্ড লাইনের মাধ্যমে পশতুনরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারণ ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম সবদিক থেকে মিল হলেও শুধু মাত্র একটি বর্ডার এই জাতিগোষ্ঠীকে করেছে দ্বিখণ্ডিত!

আফগানিস্তানে পশতুনরা ক্ষমতার মূল অংশীদার হলেও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে পাঞ্জাবিদের টপকিয়ে পশতুনদের আধিপত্য বিস্তার সম্ভব হয় না। আর তাই পাকিস্তানে বসবাসরত পশতুনদের একটা অংশ চায়, ডুরান্ড লাইন মুছে ফেলে সম্পূর্ণ পশতুন অধ্যুষিত এলাকাকে আফগানিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করা। আর আফগানিস্তানে বসবাসরত পশতুনরাতো আছেই এই একত্রীকরণে সহায়তা করতে!

পাকিস্তান রাষ্ট্র তাই তার সার্বভৌমত্ব বজায় রাখতে পশতুন এলাকা তথা আফগান সীমান্তের আড়াই হাজার কিলোমিটার অংশে শক্ত সীমানা স্থাপন করতে চায়। পাশাপাশি পশতুন বিদ্রোহীদের রুখতে এসব এলাকায় প্রায়ই সংঘর্ষে জড়াতে হয় পাকিস্তান বাহিনীকে। কাশ্মীরের সংঘর্ষে প্রতিবছর যত না সৈন্য নিহত হয় পাকিস্তানের, গত এক দশকে পশতুন এলাকায় এই সংখ্যা তার চাইতেও বেশি।

কৃত্রিম ডুরান্ড লাইন মুছে দিয়ে সমগ্র পশতুন ভূমিকে এক করতে পারলে পশতুন তথা আফগানরা ( আফগানিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রভাবশালী অংশ পশতুন সম্প্রদায়)  বিশ্বের মাঝে আরো শক্তিশালী হবে। অপরদিকে পশতুন ভূমির বিচ্ছিন্নকরণ পাকিস্তানের জমিনে শেষ পেরেক ঠুকার মতনই!

একদিকে আফগানদের স্বপ্নের দুররানী সাম্রাজ্য! অপরদিকে আল্লামা ইকবালের পাক ভূমি! চেতনাগত দিক থেকে দুইটি ভূমির উৎস এক হলেও, বিদ্যমান বাস্তবতা এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির জটিল সমীকরণ এই দুই ভূখণ্ডকে ঠেলে দিয়েছে সংঘাতের কালো গহ্বরে!

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

কুরবানি, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও বিধান। মুফতি শরীফ মোহাম্মদ সাঈদ

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

লন্ডনে সিম্পল রিজনের অফিস পরিদর্শন করলেন মুফতি সাইফুল ইসলাম

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

লিডসে শায়েখে বাঘা রহঃ-এর জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

লন্ডনের সভায় আলেমরা বি এ এস বি কমপ্লেক্সকে সহযোগিতার আহবান জানালেন।

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

বইঃ বশীর আহমদ শায়খে বাঘা রহঃ

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

বার্মিংহামে শায়েখে বাঘা রহঃ জীবন ও কর্ম শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

বায়রাক্তার টিবি২ দীপ্তিমান করছে তুরস্কের ভাগ্য

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

জার্মানিতে বছরে শতাধিক মসজিদে হামলা; উদ্বিগ্ন মুসলিমরা

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

বুজুর্গ উমেদ খাঁ। চট্টগ্রাম পুনরুদ্ধারের মহানায়ক!

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

ডুরান্ড লাইন! পাক - আফগান দ্বন্দ্বের রেড লাইন!

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

ত্রিপুরা ও বাংলার ঐতিহাসিক সম্পর্ক | পর্ব ২

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

ত্রিপুরার সাথে ইসলাম এবং বাংলাদেশের সহস্র বছরের যোগসূত্রের সন্ধানে!

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

পূর্ব আফ্রিকায় পর্তুগিজ উপনিবেশ স্থাপন, শোষণ ও ফলাফল

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

আফ্রিকার বুকে পর্তুগীজ কলোনি স্থাপনের ইতিহাস।

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

ইউরোপ থেকে ভারতবর্ষের অবিচ্ছিন্ন জলপথ আবিষ্কার।

the global affairs google play logo the global affairs apple logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ হোসাইন আহমদ

info@theglobalaffairs.info