ইবনে খালদুন আলোচনা করছিলেন, মানবসভ্যতা নিয়ে। তিনি বলেন, সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করা মানুষের জন্য আবশ্যিক। দার্শনিকরা এই সত্যটি প্রকাশ করে বলেছিলেন: "Man is "political" by nature" অর্থ্যাত 'মানুষ প্রকৃতিগতভাবে "রাজনৈতিক"। অর্থাৎ সমাজবদ্ধ না হয়ে সে থাকতে পারে না। অর্থাৎ মানুষ হলো সামাজিক জীব। সমাজেই তাকে বসবাস করতে হয় এবং সমাজের বিভিন্ন শিল্প ব্যবসা-বাণিজ্যে নিজেকে জড়িয়ে রাখতে হয়। এখন এমন কোন প্রতিষ্ঠান, অর্গানাইজেশন বা ব্যক্তি যদি তার অনুসারীদের সমাজের এই ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত না করে, কিংবা জড়িত হতে বাধা দেয়, তাহলে মনে করতে হবে যে তারা মানুষের মানবিকতার বিরুদ্ধে বা মানব সভ্যতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। কারণ এভাবে তো বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। মানুষকে বেঁচে থাকতে হলে সামাজিক হতে হবে। তাকে রাজনীতি, সমাজসেবা, ব্যবসা, শিল্প সংস্কৃতিতে জড়িত হতে হবে। তাই কোন শিক্ষাবিদ, রাজনীতিকে বাকা চোখে দেখতে পারেন না। তবে অবশ্যই রাজনীতির ধরনে ভিন্নতা থাকতে পারে বা থাকবে। ইবনে খালদুন বলেন This is what civilization means." অর্থ্যাত সভ্যতার অর্থ এটিই।
আলোচনাটি ইউটিউবে শুনুনঃ https://youtu.be/V8PVKePnQ5s
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা মানুষের গঠন এমন এক রূপে সৃষ্টি করেছেন এবং সাজিয়েছেন যে, সে কেবলমাত্র খাদ্যের সাহায্যে বেঁচে থাকতে পারে। তিনি মানুষকে খাদ্যের প্রতি স্বাভাবিক আকাঙ্খা দিয়ে তৈরি করেছেন। এবং তাকে এমন 'শক্তি'ও প্রদান করেছেন যার মাধ্যমে সে এটি অর্জন করতে পারে। কিন্তু বেচে থাকার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য এককভাবে সংগ্রহ করতে একজন মানুষের একক যে 'শক্তি' রয়েছে, সেটা যথেষ্ট নয়। একদিনের ন্যুনতম ও পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্যের কথাই ভাবুন। এর প্রস্তুতির সাথে অনেক শিল্প জড়িত। চাল প্রস্তুত করার প্রসেস। বিজ বপন থেকে নিয়ে প্লেইটে আসা পর্যন্ত। তারপর যে প্লেটেই খাওয়া হচ্ছে, বা চাল সিদ্ধ করা হচ্ছে তা তৈরিতে কি কি শিল্প জড়িত? শুধু ভাত প্রস্তুত করতেই অনেক মানুষের 'শক্তি' ভিন্ন ভিন্ন শিল্পের অধীনে কাজে লাগাতে হয়। যা অবশ্যই এক-দুজনের জন্য আঞ্জাম দেওয়া সম্ভব নয়।
খাদ্যের জন্য যেমন, ঠিক তেমনি প্রতিটি ব্যক্তির তার প্রতিরক্ষার জন্য অন্য মানুষের সাহায্য প্রয়োজন।আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা অনেক প্রাণীর মধ্যে এমন নিখুঁত ক্ষমতা দিয়েছেন, যা মানুষের গঠনের মধ্যে নেই। উদাহরণস্বরূপ, একটি ঘোড়ার শক্তি মানুষের শক্তির চেয়ে অনেক বেশি। গাধা বা একটি বলদের শক্তিও। সিংহ বা হাতির শক্তিও মানুষের শক্তির চেয়ে বহুগুণ বেশি। প্রানীর মধ্যে আগ্রাসী প্রকৃতি স্বাভাবিক। আর তাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা প্রত্যেক প্রাণীকে নিজেদের রক্ষার জন্য একটি বিশেষ অঙ্গ দিয়েছেন। মানুষকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা দিয়েছেন চিন্তার ক্ষমতা ও হাত। চিন্তার সক্ষমতার সাহায্যে হাত শিল্প তৈরি করে। অন্যান্য প্রাণীরা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য যে সব অংগ ব্যবহার করে, তার পরিবর্তে মানুষ শিল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন যন্ত্র তৈরি করে তা দিয়ে নিজেদের রক্ষা করে। যেমন আঘাত করার জন্য নখের পরিবর্তে তরবারি ও আঘাত প্রতিহত করার জন্য গাঢ় চামড়ার পরিবর্তে ঢাল ব্যবহার করা। একজন মানুষের একক সক্ষমতা একটি বোবা প্রাণীর শক্তিকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম নয়। বিশেষ করে সেটা যদি হয় কোন শিকারী প্রাণী। তাছাড়া একজনের পক্ষে প্রতিরক্ষার সবরকমের সরঞ্জাম যোগাড় করাও অসম্ভব। কারন দুনিয়ায় অসংখ্য প্রাণি বিদ্যমান। এজন্য অসংখ্য শিল্পের প্রয়োজন রয়েছে। আর তাই মানুষের জন্য অত্যাবশকীয় যে, সে অন্যান্য মানুষের সাহায্য নেবে। কো-অপারেশন করবে। যতক্ষণ না এ ধরনের কোনও কো-অপারেশন না হয়, সে কোন খাবার বা পুষ্টি অর্জন করতে পারে না। জীবন তাঁর রূপ লাভ করে না। কারণ আল্লাহ তাকে এমনভাবে তৈরিই করেছেন, যে বেঁচে থাকতে হলে তাঁর অবশ্যই খাবার লাগবে। এমনিভাবে, অস্ত্রহীনতা তাকে নিরপদ রাখে না। সে বিভিন্ন প্রাণীর শিকারে পরিণত হয় ও সময়ের অনেক আগেই মারা যায়। অবস্থা এমন হলে মানব প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
ইবনে খালদুনের মতানুসারে অস্ত্রধারী মানুষই মানবতার সুরক্ষা কারী। অস্ত্রহীন মানুষ মানবতার ধ্বংস ঢেকে আনে। বর্তমান সময়কালে আমরা দেখছি কর্পোরেট দুনিয়ার নিয়ন্ত্রারা মানুষকে অস্ত্রহীন ফার্মের পশুর মতো বানিয়ে রেখেছে তাদের কর্পোরেশন চালানোর জন্য। মানুষ তাদের অস্ত্র হারিয়ে স্বাধীনতা হারিয়েছে। নিজেদের প্রতিরক্ষা দিতে না পেরে আরেক মানুষ নামক পশুর শিকার হিসেবে দিনযাপন করছে তারা।
যখন পারস্পরিক সহযোগিতা বিদ্যমান থাকে, তখন মানুষ তার পুষ্টির জন্য খাদ্য এবং তার নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র অর্জন করে। যার মাধ্যমে মানবজাতির বেচে থাকার হিকমাহ বাস্তবায়ীত হয়। আর তাই মানবজাতির জন্য সমাজবদ্ধতা ও সামাজিক সংগঠন প্রয়োজনীয়। তা না থাকলে মানুষের অস্তিত্ব অসম্পূর্ণ হয়ে যায়। মানুষের মাধ্যমে পৃথিবী আবাদ করা ও মানুষকে পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে থাকার আল্লাহর ইচ্ছা পূর্ণ হয় না। এটিই সভ্যতার অর্থ। এ নিয়েই আমাদের আলোচনা। আল্লাহ তাওফিক দিন।
মানবজাতি যখন সমাজবদ্ধ হয় ও সামাজিক সংগঠন অর্জন করে। যেমনটি আমরা বলেছি। এবং যখন পৃথিবীতে সভ্যতা তৈরি হয়ে যায়। তখন তাদের এমন কারো প্রয়োজন পড়ে যে মানুষের প্রভাপ-প্রতিপত্তি, আগ্রাসনকে সংযত করে রাখবে। কারণ আগ্রাসী এবং অবিচার মানুষের প্রাণী প্রকৃতিতে রয়েছে।
বোবা প্রাণীদের আক্রমণ থেকে মানুষকে রক্ষার জন্য যে অস্ত্র তৈরি করা হয়েছে, সেটা মানুষকে অন্য মানুষের আক্রমণ থেকে বাচানোর জন্য যথেষ্ট হয় না। কারণ সকল মানুষেরই অধিকারে তা রয়েছে। সুতরাং, মানুষকে একে অপরের আগ্রাসন থেকে বেচে থাকতে হলে অন্য কিছু একটার বা কারো প্রয়োজন পড়ে। যেহেতু মানুষ সকল প্রানী থেকে সুপিরিয়র, তাই সেই 'অন্য কেউ' মানুষের মধ্য থেকেই আসতে হবে। যিনি মানুষকে আগ্রাসী হতে বাধা দেবেন, আগ্রাসন নিয়ন্ত্রণ করবেন। তাকে অবশ্যই মানুষের মধ্য থেকে কেউ একজন হতে হবে। যিনি ক্ষমতা ও কর্তৃত্বে হবেন শ্রেষ্ঠ। যাতে করে কেউ কারো উপর অন্যায় আঘাত করতে না পারে। এটিই হলো রাজকীয় বা রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের অর্থ।
এভাবে এটি স্পষ্ট হয়ে গেলো, যে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব মানুষের একটি প্রাকৃতিক গুণ যা মানবজাতির জন্য সম্পূর্ণরুপে জরুরী একটি বিষয়। (চলবে...।)
কুরবানি, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও বিধান। মুফতি শরীফ মোহাম্মদ সাঈদ
লন্ডনে সিম্পল রিজনের অফিস পরিদর্শন করলেন মুফতি সাইফুল ইসলাম
লিডসে শায়েখে বাঘা রহঃ-এর জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
লন্ডনের সভায় আলেমরা বি এ এস বি কমপ্লেক্সকে সহযোগিতার আহবান জানালেন।
বইঃ বশীর আহমদ শায়খে বাঘা রহঃ
বার্মিংহামে শায়েখে বাঘা রহঃ জীবন ও কর্ম শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত
বায়রাক্তার টিবি২ দীপ্তিমান করছে তুরস্কের ভাগ্য
জার্মানিতে বছরে শতাধিক মসজিদে হামলা; উদ্বিগ্ন মুসলিমরা
বুজুর্গ উমেদ খাঁ। চট্টগ্রাম পুনরুদ্ধারের মহানায়ক!
ডুরান্ড লাইন! পাক - আফগান দ্বন্দ্বের রেড লাইন!
ত্রিপুরা ও বাংলার ঐতিহাসিক সম্পর্ক | পর্ব ২
ত্রিপুরার সাথে ইসলাম এবং বাংলাদেশের সহস্র বছরের যোগসূত্রের সন্ধানে!
পূর্ব আফ্রিকায় পর্তুগিজ উপনিবেশ স্থাপন, শোষণ ও ফলাফল
আফ্রিকার বুকে পর্তুগীজ কলোনি স্থাপনের ইতিহাস।
ইউরোপ থেকে ভারতবর্ষের অবিচ্ছিন্ন জলপথ আবিষ্কার।
কুরবানি, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও বিধান। মুফতি শরীফ মোহাম্মদ সাঈদ
লন্ডনে সিম্পল রিজনের অফিস পরিদর্শন করলেন মুফতি সাইফুল ইসলাম
লিডসে শায়েখে বাঘা রহঃ-এর জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
লন্ডনের সভায় আলেমরা বি এ এস বি কমপ্লেক্সকে সহযোগিতার আহবান জানালেন।
বইঃ বশীর আহমদ শায়খে বাঘা রহঃ
বার্মিংহামে শায়েখে বাঘা রহঃ জীবন ও কর্ম শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত
বায়রাক্তার টিবি২ দীপ্তিমান করছে তুরস্কের ভাগ্য
জার্মানিতে বছরে শতাধিক মসজিদে হামলা; উদ্বিগ্ন মুসলিমরা
বুজুর্গ উমেদ খাঁ। চট্টগ্রাম পুনরুদ্ধারের মহানায়ক!
ডুরান্ড লাইন! পাক - আফগান দ্বন্দ্বের রেড লাইন!
ত্রিপুরা ও বাংলার ঐতিহাসিক সম্পর্ক | পর্ব ২
ত্রিপুরার সাথে ইসলাম এবং বাংলাদেশের সহস্র বছরের যোগসূত্রের সন্ধানে!
পূর্ব আফ্রিকায় পর্তুগিজ উপনিবেশ স্থাপন, শোষণ ও ফলাফল
আফ্রিকার বুকে পর্তুগীজ কলোনি স্থাপনের ইতিহাস।
ইউরোপ থেকে ভারতবর্ষের অবিচ্ছিন্ন জলপথ আবিষ্কার।