এ পর্যায়ে এসে ইবনে খালদুন কিছু আলেমদের বক্তব্যের উদ্বৃতি এনেছেন। যেমন তিনি বলেছেনঃ “human beings co-operate with each other for their existence”, অর্থ্যাত "মানুষ তাদের অস্তিত্ব ঠিকিয়ে রাখার জন্য একে অপরের সাথে সহযোগিতা করে যায়"। অর্থাৎ বেচে থাকা ও টিকে থাকার স্বার্থেই মানুষকে একে অন্যের সাথে কো-অপারেট করে যেতে হয়। একজনের কাছ থেকে আরেক জনকে সহযোগিতা নিতে হয়। এজন্য একজন ব্যাক্তি যদি জীবনে উন্নতি করতে চায়, তাহলে তার উচিত বেশি বেশি কো-অপারেট করা। সহযোগিতার মানসিকতা রাখা। এটা সাফল্যের চাবিকাঠি। আর কেউ যদি চায় জীবনে যতটুকু ব্যাক্তিগত, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতি করেছে, সেটাই যথেষ্ট। তাহলে তার আর কো-অপারেশনের কোন প্রয়োজন নেই। আশেপাশের মানুষকে কেউ যদি অবহেলা করে, ইগনোর করে, যোগ্য মর্যাদা না দেয়, তাহলে একসময় সম্মানিতরা মানে মানে কেটে পড়বে। যাদের মধ্যে Dignity আছে, আত্নসম্মান আছে, তারা নীরবে সরে যায়। তেমনি কোন অর্গানাইজেশন বা রাষ্ট্রের উন্নতিতেও কো-অপারেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সংঘঠন বা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে যদি কো-অপারেশন ও সংহতি না থাকে তাহলে তা ব্যার্থ হিসেবে আবির্ভূত হবে। নতুন কোন দলের উত্থান বা কোন বিপ্লবের পথে কো-অপারেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই একটি দলের উচিত হবে সহযোগিতার পথে যতধরনের বাধা আছে সেগুলোকে সরিয়ে দেয়া।
বিপরীতে বর্তমানে আমরা দেখি বিভিন্ন ব্যক্তি, রাজনৈতিক ও সামাজিক দলগুলোর কার্যকলাপে; অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে ও বাইরে (internal & external) অসযোগীতার মানসিকতা, আচরণ প্রকাশিত হয়ে থাকে। তারা এটা যদি আমলে রাখতেন, যে মূল লক্ষ্যকে প্রথম প্রায়োরিটি রেখে কিভাবে বাকি বিরোধিতাগুলোকে যথাসম্ভব এড়িয়ে যাওয়া। তারা যদি মূল সমস্যা দূরিকরনে ব্যস্ত থেকে ছোট ছোট সমস্যাকে সাময়িক এড়িয়ে যেতেন, তাহলে অনেক বেশি সহযোগিতা ও সংহতির পরিবেশ তৈরি হতো। তাদের কাজের পরিধি বেড়ে যেত। লক্ষ্যপাণে দ্রুত এগিয়ে যেতেন। আজকে এর উপর স্পেসিফিক কোন উদাহরণ টানলাম না। কিন্তু তারপরেও আশা রাখি বিষয়টা কিছু পরিস্কার করতে পেরেছি।
একটি ফ্যাক্ট হলো, “people need means to express their intention” অর্থ্যাত "মানুষকে তাদের অভিপ্রায় প্রকাশের জন্য উপায় বা উপকরণের প্রয়োজন পড়ে"। অর্থাৎ মানুষকে তার ইচ্ছা, অভিপ্রায়, প্রয়োজন, ভালোবাসা, ঘৃনা সবকিছু প্রকাশ করতে কিছু একটার সাহায্য নিতে হয়। এই প্রকৃতি দিয়েই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা তার এই সৃষ্টিকে তৈরি করেছেন। সুতরাং উপায় ও উপকরন ছেড়ে দিলে জীবন চলবে না। সমাজ চলবে না। কেউ যদি উপকরণ ছেড়ে দেয়। কিংবা এর বিপক্ষে প্রচারণা করে তাহলে বুঝতে হবে সেই ব্যক্তি বা সংগঠন প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলার সুন্নাহ, তার শারিয়াহর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। নবীদের জীবনের পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তারা সবসময় যুগ চাহিদা অনুসারে উপকরণ গ্রহণ করেছেন। উপকরণ গ্রহণ না করা এটা তাওয়াক্কুল নয়।
একবার উমর (রাঃ) কিছু লোককে কাজের সময় মসজিদে বসে থাকতে দেখে বললেন, তোমরা কারা? অর্থাৎ এই সময়ে তোমরা মসজিদে বসা কেন? এখন তো কাজের সময়। তারা বলল আমরা মুতাওয়াককিলুন। অর্থাৎ তাওয়াককুল কারী। আমরা আল্লাহর উপর ভরসা করে বসে আছি, কাজ কামের কোন প্রয়োজন নেই। তিনি বললেন, না তোমরা মুতাওয়াকিলুন, নির্ভরশীল। অর্থাৎ তোমরা তাওয়াককুল করছো না, তাওয়াকুল করছো। তোমরা পরনির্ভরশীল।
আমরা যদি দুনিয়ার স্বাভাবিক নিয়মের দিকে তাকাই, যা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার সুন্নাহ, তাহলে দেখতে পাবো এই উপকরণ দিয়েই তিনি দুনিয়াকে সাজিয়েছেন। তাই উপকরণ রেখে দুনিয়া এবং আলটিমেটলি আখেরাতের সাফল্য অসম্ভব। একজন ব্যবসা করবেন, কিন্তু পর্যাপ্ত উপকরণ নিলেন না। তিনি কি সফল হবেন? হবেন না। যেমন ব্যবসায় সাফল্য লাভ করতে চাইলে মুলধনের পাশাপাশি অভিজ্ঞতা অর্জন করুন। এই ক্ষেত্র নিয়ে স্টাডি করুন। সাফল্য-ব্যার্থতার হিসেব করুন। প্রথম চেষ্টায় ব্যর্থ হলে ২য়, ৩য় পথ খুলা রাখুন। বিভিন্ন কোর্স করুন। ব্যবসা লস হতে পারে এই সম্ভাবনা মাথায় রেখে এর জন্য শুরুতেই এগজিট প্লান বানিয়ে রাখেন। এসবই উপকরণ। এসব অবলম্বনের পরে যখন কেউ ব্যর্থ হয় তখন এটা তার তাক্বদির। বিশেষ করে দ্বীনের ক্ষেত্রে, ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী রাজনীতির ক্ষেত্রে আজকাল মানুষ খুব বেশিই এমন করে থাকে। শরিয়া কায়েমের জন্য প্রচেষ্টা না করে অনেকেই মনে করে এমনিতেই একদিন সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। শরিয়াহ প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। এমনিতেই কেউ এসে বলবে, আপনারা তো খুব ভালো মানুষ, আসুন আপনাদেরকে আমরা রাষ্ট্র বানিয়ে দিলাম, এখন এটা চালান। কেউ মনে করেন হঠাৎ একদিন আল্লাহর সাহায্য নেমে আসবে, এবং দুনিয়ার বুকে জুলুম বন্ধ হয়ে যাবে। দ্বীন কায়েম হয়ে যাবে। মানুষ সুখে শান্তিতে বসবাস করা শুরু করবে। এর জন্য উপকরণ গ্রহণের মাধ্যমে কাজ করার কোন প্রয়োজন নেই। শুধু আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। এমন ভাবনা সম্পূর্ণ আজগুবি ও বেহুদা। অযৌক্তিক ও অপ্রাকৃতিক। সুনান আল কাউনিয়া ও সুনান আশ শারিয়াহ দুটোরই বিরুধী।
যাক ইবনে খালদুন বলছেন, মানুষের স্বহজাত প্রবণতা ও প্রয়োজন হলো, সে কোন একটি উপকরণ গ্রহণ করে, নিজেকে প্রকাশ করার জন্য। জীবনের চাকা সচল রাখার জন্য। এটা আবশ্যক। এরপরে ইবনে খালদুন যে উক্তিটি এনেছেন সেটা হলঃ
“laws have their reason in the purposes they are to serve,”। প্রতিটি আইনের একটি উদ্দেশ্য থাকে যে সে কি লক্ষ্য বাস্তবায়ন করবে বা আঞ্জাম দেবে। যেমন সেকুলার আইন। সেকুলার আইনের লক্ষ্য সেকুলার সমাজ ও রাষ্ট্রকে সেবা করা। সেকুলার আইনে ধর্ম রাষ্ট্র থেকে আলাদা থাকবে। উদাহরণ স্বরুপ ধর্মীয় রাজনীতি সেকুলার আইনের লক্ষ্যের সাথে সাংঘর্ষিক। কোন রাষ্ট্র যদি ধর্মীয় রাজনীতি সাময়িকের জন্য অনুমোদন করে, তাহলে সেটা শুধুই সাময়িক। সেকুলার আইন সেকুলার ভ্যালু, আদর্শ বাস্তবায়ন করে থাকে। এর সেবা করে যায়। সেকুলার আইনের অধিনে থাকা কোন দেশে যদি, উদাহরণ স্বরূপ, কেউ ইসলামী পোশাক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থা চালু রাখে, তাহলে এটা সেই রাষ্ট্রের দুর্বলতার কারনে হয়ে থাকে। এগুলো সেকুলার আইনের লক্ষ্যের সাথে সাংঘর্ষিক। সেকুলার আইনের বিপরীত। এটা শুধু এজন্য এলাও করা হয়, কারন এই মুহুর্তে সংঘর্ষ এড়িয়ে প্রথমে ধীরগতিতে সেকুলার আদর্শ অনুযায়ী সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।
সেকুলার আদর্শ বিরুধী কিছু সহজ উদাহরণ দেওয়া যাক। যেমন মুসলমানদের ধর্মীয় পোশাক পাঞ্জাবী, তুব, বোরকা ইত্যাদি সেকুলার আদর্শ ও লক্ষ্যের সাথে সাংঘর্ষিক। সেকুলার আইনের লক্ষ্য হলো মানুষের শরীর থেকে তা খুলিয়ে ফেলা। আজ হয়তো পারা যাচ্ছে না, কিন্তু চুড়ান্ত লক্ষ্য তাই। তবে মিডিয়ায় আমরা ঠিকই দেখি এসব পোশাক সেকুলার আদর্শ বিরুধী হওয়ায় এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ভাবে প্রপাগাণ্ডা করা হয়, হাসাহাসি করা হয়। বিভিন্ন দেশে অবশ্য আইন পাশ করে এক দুটি পোশাকও নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়। আর তাই সেকুলার আইনে শাসিত কোন দেশে কখনো রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ইসলাম থ্রাইভ করবে না। ইসলামপন্থীরা ক্ষমতাবান হবেন না। এজন্য যারা ভাবছেন সেকুলার আইনের অধীনেই আজীবন কাজ করে যাওয়া সম্ভব, ধর্মীয় সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নতি করে যাওয়া সম্ভব, কিছু একটা করা সম্ভব তারা নিশ্চিত ভ্রমের মধ্যে আছেন। তাদের উচিত হবে মরীচিকা আশা ছেড়ে এই বাস্তবতা অনুধাবন করা। যে সেকুলার আইনের আওতায় গিয়ে কখনো ইসলামী শরিয়াহ কায়েম সম্ভব নয়। তাদের উচিত হবে সরাসরি ইসলামী আইন বাস্তবায়নের জন্য কাজ করা। কারন ইসলামি আইনের লক্ষ্য হলো সমাজে ইসলামি আদর্শ, সাংস্কৃতি বাস্তবায়ন করা। (চলবে...)
কুরবানি, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও বিধান। মুফতি শরীফ মোহাম্মদ সাঈদ
লন্ডনে সিম্পল রিজনের অফিস পরিদর্শন করলেন মুফতি সাইফুল ইসলাম
লিডসে শায়েখে বাঘা রহঃ-এর জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
লন্ডনের সভায় আলেমরা বি এ এস বি কমপ্লেক্সকে সহযোগিতার আহবান জানালেন।
বইঃ বশীর আহমদ শায়খে বাঘা রহঃ
বার্মিংহামে শায়েখে বাঘা রহঃ জীবন ও কর্ম শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত
বায়রাক্তার টিবি২ দীপ্তিমান করছে তুরস্কের ভাগ্য
জার্মানিতে বছরে শতাধিক মসজিদে হামলা; উদ্বিগ্ন মুসলিমরা
বুজুর্গ উমেদ খাঁ। চট্টগ্রাম পুনরুদ্ধারের মহানায়ক!
ডুরান্ড লাইন! পাক - আফগান দ্বন্দ্বের রেড লাইন!
ত্রিপুরা ও বাংলার ঐতিহাসিক সম্পর্ক | পর্ব ২
ত্রিপুরার সাথে ইসলাম এবং বাংলাদেশের সহস্র বছরের যোগসূত্রের সন্ধানে!
পূর্ব আফ্রিকায় পর্তুগিজ উপনিবেশ স্থাপন, শোষণ ও ফলাফল
আফ্রিকার বুকে পর্তুগীজ কলোনি স্থাপনের ইতিহাস।
ইউরোপ থেকে ভারতবর্ষের অবিচ্ছিন্ন জলপথ আবিষ্কার।
কুরবানি, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও বিধান। মুফতি শরীফ মোহাম্মদ সাঈদ
লন্ডনে সিম্পল রিজনের অফিস পরিদর্শন করলেন মুফতি সাইফুল ইসলাম
লিডসে শায়েখে বাঘা রহঃ-এর জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
লন্ডনের সভায় আলেমরা বি এ এস বি কমপ্লেক্সকে সহযোগিতার আহবান জানালেন।
বইঃ বশীর আহমদ শায়খে বাঘা রহঃ
বার্মিংহামে শায়েখে বাঘা রহঃ জীবন ও কর্ম শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত
বায়রাক্তার টিবি২ দীপ্তিমান করছে তুরস্কের ভাগ্য
জার্মানিতে বছরে শতাধিক মসজিদে হামলা; উদ্বিগ্ন মুসলিমরা
বুজুর্গ উমেদ খাঁ। চট্টগ্রাম পুনরুদ্ধারের মহানায়ক!
ডুরান্ড লাইন! পাক - আফগান দ্বন্দ্বের রেড লাইন!
ত্রিপুরা ও বাংলার ঐতিহাসিক সম্পর্ক | পর্ব ২
ত্রিপুরার সাথে ইসলাম এবং বাংলাদেশের সহস্র বছরের যোগসূত্রের সন্ধানে!
পূর্ব আফ্রিকায় পর্তুগিজ উপনিবেশ স্থাপন, শোষণ ও ফলাফল
আফ্রিকার বুকে পর্তুগীজ কলোনি স্থাপনের ইতিহাস।
ইউরোপ থেকে ভারতবর্ষের অবিচ্ছিন্ন জলপথ আবিষ্কার।