ইতিহাসের ছাত্ররা মাঝে মাঝে কিছু ভুল করে বসেন। যেমন রাজবংশের বা রাষ্ট্রের ইতিহাস লিখতে গিয়ে অনেকেই একটা ভুল করেছেন। ইতিহাস লিখতে গিয়ে তারা শাসকের পিতা-মাতার নাম, দাদার নাম, এমনকি কতজন চাকর ছিলেন তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। ইবনে খালদুন বলেনঃ
“In this respect, they blindly follow the tradition of the historians of the Umayyad and Abbasid dynasties. Without being aware of the purposes of those historians.”
অর্থাৎ, তারা পূর্ববর্তী ঐতিহাসিকদের লেখা কপি করে গেছেন চুখ বুজে। তারা ঐসব উমাইয়্যাহ ও আব্বাসী ঐতিহাসিকদের অভিপ্রায় আমলে নেননি।
পুরো আলোচনাটি শুনুন ইউটিউবেঃ https://youtu.be/TS8IgPPoGgk
সরকারি ঐতিহাসিকরা তাদের বইয়ে শাসকদের পারিবারিক অনেক তথ্য এজন্য সংযুক্ত করেছেন, যাতে সেইসব শাসকদের সন্তানরা ক্ষমতায় আসার পরে সেখান থেকে ইনফর্মেশন ও ফায়দা পেতে পারে। কিন্তু পরবর্তী ঐতিহাসিকদের তাদের বইয়ে, কথায়ও শিক্ষাদানে তা চোখ বুজে কপি করা ছিল ভুল। কারণ যুগের পালাবদলে অনেক নতুন নতুন রাজবংশ ও রাষ্ট্রের উত্থান-পতন হয়েছে। ইবনে খালদুন বলছেনঃ
“Therefore, it is pointless for an author of the present time to mention the sons and wives, the engraving on the seal ring, the surname, judge, wazir, and doorkeeper of an ancient dynasty.”
অর্থাৎ, বর্তমান সময়ের একজন ঐতিহাসিকের জন্য পূর্বেকার রাজবংশের খুঁটিনাটি বিষয় বর্ণনা করা বা শিক্ষা দেয়া অর্থহীন। আজকের দিনে আমরা কি একই বিষয় দেখছি না। শুধু কি ইতিহাস? ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সাহিত্য সহ বিভিন্ন সাবজেক্টের উপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এমন অনেক অপ্রয়োজনীয় তথ্য শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। কিছু বিতর্কের রসদ ছাড়া দুনিয়া-আখেরাতে কোন লাভ নিয়ে আসবে বলে ধারণা করা যায় না। বর্তমানে আমরা দেখি অনেক অপ্রয়োজনীয় সিলেবাস শিক্ষা দিয়ে সময় বরবাদ করা হচ্ছে। আমাদের মাদ্রাসা কিংবা জেনারেল লাইনে, দুই শিক্ষাব্যবস্থায়ই অনেক অপ্রয়োজনীয় সিলেবাস সংযুক্ত করে রাখা হয়েছে।
২০১৫ সালের১৬ সেপ্টেম্বর কমাশিশা ডট কমে একটি আর্টিকেল, “কওমি মাদ্রাসা সংস্কারঃ মৌলিক না আংশিক” শিরোনামে প্রকাশিত হয়। সেই আর্টিকেলে ঈসা মানসূরীর বক্তব্য উল্লেখ করা হয়েছিল। তিনি বলেছেনঃ “আমাদের উলামায়ে কেরামের একটি শ্রেণী দেড়শত বছর পূর্বের পুরাতন ও বিলুপ্ত চিন্তা-চেতনা ও দর্শন সংক্রান্ত অনর্থক আলোচনায় লিপ্ত। ইসলাম ধর্ম আত্মপ্রকাশের সময় যেমন খৃস্টান আলিমগণ গ্রীক দর্শন চর্চার অনর্থক কাজে লিপ্ত ছিল”। তিনি আরো বলেন বলেছেনঃ “আবুল হাসান আলী নদবি (রহঃ) দেওবন্দের উলামায়ে কেরামের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত এক ভাষণে এভাবে উল্লেখ করেন, “আজ আমাদের সমাজে বেশিরভাগ মানুষ পশ্চিমাদের দর্শনের প্রতি ঝুকে পড়েছে। এর আসল কারণ আমাদেরই দুর্বলতা। আজ যেখানে আমরা ইসলামের প্রতিটি শাখা-প্রশাখায় বিচরণ করে শ্রেষ্ঠ হিসেবে গড়ে ওঠে ইসলাম সম্পর্কে সর্বশ্রেণীর মানুষের সন্দেহ-সংশযয়ের অপনোদন করার কথা ছিল। আমরা সেখানে আজ ফেকাহের মুস্তাহাব-সুন্নাত সম্পর্কিত, শাফেয়ী-হানাফিদের মধ্যে বিতর্কিত কিছু বিষয়কে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করে এগুলোকে প্রমাণাদিসহ উপস্থাপন করে এর পেছনে নিজেদের মেধাকে ব্যয় করাকে সর্বাধিক প্রয়োজনীয় বলে মনে করছি। এবং তা করতে পেরে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছি।
অথচ হাজার হাজার, লক্ষ-লক্ষ বনী আদম আজ ঈমান হারাচ্ছে। সন্দেহ-সংশয় তাদের নিত্যসঙ্গী। তাদেরকে সঠিক পথে আনার আমাদের কোন ফিকির নেই। এরপর মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী (রহঃ) এর বক্তব্য উল্লেখ করেন। “একবার তিনি লাহোরে এলে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ তার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসে। তারা তার সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। তাদের মনে যত প্রকার প্রশ্ন ছিল, সব মাওলানা সামনে পেশ করলেন। এগুলো শুনে মাওলানা কাশ্মীরির মনে ব্যাথা জাগল।
সকালবেলা মুফতি শফি (রহঃ) দেখা করতে গেলে দেখলেন তিনি একটি বাক্য বারবার বলছিলেনঃ ‘আমার জীবন বৃথা গেল, আমার জীবন বৃথা গেল’। মাওলানা শফী সাহেব তখন বললেন, হযরত! আপনি কি বলছেন? আপনি তো গোটা জীবন হাদিসের খেদমত করেছেন। আপনার লাখ লাখ ছাত্র আছে। তাদের কেউ মুহাদ্দিস, মুফতি, লেখক, গবেষক ইত্যাদি। দেশে-বিদেশে সর্বত্র তাঁরা ছড়িয়ে রয়েছেন। তো আপনার জীবন কী করে বৃথা গেল? প্রত্যুত্তরে আল্লামা কাশ্মীরি বলেনঃ আমরা হাদিস পড়াচ্ছি, কিতাব পড়াচ্ছি। এ মাসআলার হানাফিদের পক্ষে এ দলীল আছে, শাফেয়ীদের পক্ষে এই দলীল আছে। প্রত্যেক মাযহাবের দলীল পেশ করে হানাফী মাযহাবের প্রধান্য প্রমাণ করি। অথচ মাসআলা সুন্নাত ও মুস্তাহাব পর্যায়ের। কিন্তু আমি আজ বাইরে বের হয়ে জনসাধারণের সাথে সাক্ষাতের মাধ্যমে বুঝতে পারলাম তাদের কেউ আল্লাহকে অস্বীকার করছে, নবীকে অস্বীকার করছে, শিরক করছে। কেউ কোরআনকে অস্বীকার করছে। তাদের মধ্যে সুন্নাত-মুস্তাহাব মাসআলার বিরোধ নিয়ে আলোচনা চলছে না। তারা সমাজের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে। তাদের জন্য আমি কি কর্মসূচী দিয়েছি? তাদের সন্দেহ নিরসনের জন্য কি কি ধারা বর্ণনা করেছি? আল্লাহকে অস্বীকার না করার জন্য আমি মূলনীতি উপস্থাপন করেছি?”
বর্তমানে আমাদের জরুরী বিষয় হলো জনসাধারণের প্রশ্নের সঠিক উত্তর খুঁজে বের করা। তাদেরকে দ্বীনের প্রতি ফিরিয়ে আনার জন্য মূলনীতি, কর্মসূচি ও কর্মধারা প্রণয়ন করা। তাদেরকে এহেন কাজ থেকে সরিয়ে এনে ইসলামের গন্ডির ভেতরে প্রবেশ করাতে হবে। আল্লামা কাশ্মীরির কথা থেকে স্পষ্ট, যা বর্তমানে আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। অপ্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জন, বিতর্ক, শর্ট কোর্স ইত্যাদির পেছনে অনেকেই সময়ের অপচয় করছেন। ছুটে বেড়াচ্ছেন। যুগ চাহিদা, টার্ম, সমস্যার আলোকে শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার করা হচ্ছে না। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, যে ব্যাপারে ইবনে খালদুন বলেছেনঃ
“Present day authors mention all these things in mere blind imitation of former authors. They disregard the intention of former authors and forget to pay attention to historiography’s purpose.”
অর্থাৎ পুরনো লেখকদের বই, সিলেবাস বর্তমানকালের লেখকরা চোখ বন্ধ করে কপি করে যাচ্ছেন। তারা তখনকার লেখকদের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আনছেন না। বর্তমানে মূলনীতি ঠিক রেখে আক্বীদার বইগুলো নতুনভাবে ব্যাখ্যা করা সময়ের দাবি। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করলে দেখতে পাই বর্তমানকালের আক্বীদা ও ফিক্বহের বড় বড় ইস্যুগুলোকে এড্রেস করে করে সিলেবাসের বইগুলো ব্যাখ্যা করে পড়ানো হচ্ছে না।
কিছু লোক আছে শুধু কোরআন থেকে দলীল মানে। হাদীসের অথেন্টিসিটি স্বীকার করে না। এদের অস্তীত্ব আগেও যেমন ছিল এখনো আছে। তাদের অবস্থান, বাব-ভাব, চালচলন বিশদ ব্যাখ্যা করে ছাত্রদের পড়ানো উচিত। বেশ আগে ইসলামী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত উসূলে হাদীসের উপর একটি ছোট্র রিসালা পড়ছিলাম। সেখানে ভূমিকাতে হাদিসের ট্রান্সমিশন ও সহীহ হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ করা হয়েছে। ভাবতে পারেন? ইসলামী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের মত একটি প্রতিষ্ঠান, হাদীসের উপর লেখা বইয়ে হাদীস নিয়ে সন্দেহ তৈরি করে দিচ্ছে।
প্রতিটি যুগের পরিবর্তনে ফিতনা তার নাম পরিবর্তন করে মানুষকে ধোঁকা দেয়। আর তাই মুসলিম শিক্ষাবিদদের উচিত হবে এসব প্রয়োজনীয় সাবজেক্ট নিয়ে কাজ করা। যেমনঃ সেকুলারিজম, লিবারালিজম, গণতন্ত্র ও ইন্ট্রারফেইথ ইত্যাদি। এসবের নামে সাধারণ মুসলিমদের কিভাবে ধর্মহীন করা হচ্ছে সেটা নিয়ে কনস্ট্রাক্টিভ, একাডেমিক আলোচনা করা ও সিলেবাসের আক্বীদার আওতায় ব্যাখ্যা করে শিক্ষা ছিল জরুরী। এখন তো এগুলো শিক্ষাদান জীবন-মরণের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুসলিম যদি জানেই না সে বুলেটের গতিতে ঈমান হারাচ্ছে, তাহলে তার এই ঈমানহীন শরীরের বোঝা বয়ে বেড়ানোর কিই বা মূল্য থাকতে পারে। বিশেষ করে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থায়। এখানে ডক্টর বা ইঞ্জিনিয়ার তৈরি করা হয় না। এটা আশা করাও হয় না। তবে এখানে আক্বীদা শিক্ষা দেওয়া হয়। এখান থেকে যুগের বড় বড় ফিতনা এড্রেস করা না হলে এসব প্রতিষ্ঠান আস্তা হারাবে বলে মনে করি। (চলবে...)
কুরবানি, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও বিধান। মুফতি শরীফ মোহাম্মদ সাঈদ
লন্ডনে সিম্পল রিজনের অফিস পরিদর্শন করলেন মুফতি সাইফুল ইসলাম
লিডসে শায়েখে বাঘা রহঃ-এর জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
লন্ডনের সভায় আলেমরা বি এ এস বি কমপ্লেক্সকে সহযোগিতার আহবান জানালেন।
বইঃ বশীর আহমদ শায়খে বাঘা রহঃ
বার্মিংহামে শায়েখে বাঘা রহঃ জীবন ও কর্ম শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত
বায়রাক্তার টিবি২ দীপ্তিমান করছে তুরস্কের ভাগ্য
জার্মানিতে বছরে শতাধিক মসজিদে হামলা; উদ্বিগ্ন মুসলিমরা
বুজুর্গ উমেদ খাঁ। চট্টগ্রাম পুনরুদ্ধারের মহানায়ক!
ডুরান্ড লাইন! পাক - আফগান দ্বন্দ্বের রেড লাইন!
ত্রিপুরা ও বাংলার ঐতিহাসিক সম্পর্ক | পর্ব ২
ত্রিপুরার সাথে ইসলাম এবং বাংলাদেশের সহস্র বছরের যোগসূত্রের সন্ধানে!
পূর্ব আফ্রিকায় পর্তুগিজ উপনিবেশ স্থাপন, শোষণ ও ফলাফল
আফ্রিকার বুকে পর্তুগীজ কলোনি স্থাপনের ইতিহাস।
ইউরোপ থেকে ভারতবর্ষের অবিচ্ছিন্ন জলপথ আবিষ্কার।
কুরবানি, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও বিধান। মুফতি শরীফ মোহাম্মদ সাঈদ
লন্ডনে সিম্পল রিজনের অফিস পরিদর্শন করলেন মুফতি সাইফুল ইসলাম
লিডসে শায়েখে বাঘা রহঃ-এর জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
লন্ডনের সভায় আলেমরা বি এ এস বি কমপ্লেক্সকে সহযোগিতার আহবান জানালেন।
বইঃ বশীর আহমদ শায়খে বাঘা রহঃ
বার্মিংহামে শায়েখে বাঘা রহঃ জীবন ও কর্ম শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত
বায়রাক্তার টিবি২ দীপ্তিমান করছে তুরস্কের ভাগ্য
জার্মানিতে বছরে শতাধিক মসজিদে হামলা; উদ্বিগ্ন মুসলিমরা
বুজুর্গ উমেদ খাঁ। চট্টগ্রাম পুনরুদ্ধারের মহানায়ক!
ডুরান্ড লাইন! পাক - আফগান দ্বন্দ্বের রেড লাইন!
ত্রিপুরা ও বাংলার ঐতিহাসিক সম্পর্ক | পর্ব ২
ত্রিপুরার সাথে ইসলাম এবং বাংলাদেশের সহস্র বছরের যোগসূত্রের সন্ধানে!
পূর্ব আফ্রিকায় পর্তুগিজ উপনিবেশ স্থাপন, শোষণ ও ফলাফল
আফ্রিকার বুকে পর্তুগীজ কলোনি স্থাপনের ইতিহাস।
ইউরোপ থেকে ভারতবর্ষের অবিচ্ছিন্ন জলপথ আবিষ্কার।