সাইফুদ্দীন আহমদ।
আসাম, বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী ভারতীয় প্রদেশ। ভারতীয় প্রদেশ হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের পর আসামের সাথেই সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশের ভাষাগত এবং সাংস্কৃতিক মিল রয়েছে। তবে আশ্চর্যজনক হলেও সত্য আমরা পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্ক যেভাবে জানি এবং খবর রাখি, আসাম সম্পর্কে তার এক শতাংশও খবর রাখি না।
আসামের সাথে আমাদের যেমন ভাষাগত মিল রয়েছে, তেমনি ধর্মীয় ও ঐতিহ্যগতও ব্যাপক সাদৃশ্য বিদ্যমান। বর্তমানে মুসলিম পার্সেন্টেজের হিসেবে ভারতের কাশ্মীর এবং লাক্ষাদ্বীপের পরেই আসামের অবস্থান।
ভারতের সেভেন সিস্টার্স নামক সাতটি রাজ্য তার মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। এই সেভেন সিস্টার্সের ত্রিপুরা ও মণিপুর বাদে বাকি চারটি রাজ্যের জন্ম মূলত আসাম থেকে। আসাম ভেঙেই পরবর্তীতে মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং অরুণাচল প্রদেশ গড়ে উঠে।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সবসময়ই আশংকায় থাকে, ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক ভিন্নতার জন্য সেভেন সিস্টার্স তার হাতছাড়া হতে পারে। এর উপর ধর্মীয়ভাবে যদি সংখ্যাগুরু হিন্দুরা সেভেন সিস্টার্সে সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে, তাহলে সেই আশংকা বাস্তবে রূপ নেয়ার সম্ভবনা আরো বেড়ে যায়। ইতোমধ্যে ত্রিপুরা এবং আসাম বাদে সেভেন সিস্টার্সের বাকি পাঁচটি রাজ্য খ্রিস্টান সংখ্যা গরিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।
খ্রিস্টান সংখ্যা গরিষ্ঠ রাজ্যগুলো ভারতের জন্য প্রাথমিকভাবে হুমকি হবার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কেননা ভারতের আশেপাশে কোনো খ্রিস্টান দেশ নেই। কিন্তু কোনো রাজ্য মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ হলে তা ভারতের জন্য বিপদজনক হতে পারে বলে দেশটির নীতিনির্ধারকেরা ধারণা করেন। আর তা যদি হয়, মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন তাহলে সে আশংকা আরো বৃদ্ধি পায়। আসামের ক্রমবর্ধমান মুসলিম জনসংখ্যা দিল্লিকে সে ভয় এনে দিচ্ছে। আর তাই আসামের মুসলমানদের উদ্বিগ্ন হবার মতো নানাধরণের পদক্ষেপে লিপ্ত হচ্ছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। সেই সাথে যুক্ত হয়েছে পুরানো অসমীয়া ভাষীদের সাথে বাংলা ভাষীদের ঐতিহাসিক বিরোধ।
আসামের অসমীয়া সরকার এবং ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক বাঙালি মুসলিমদের বহিরাগত হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা কয়েক যুগ ধরে হচ্ছে। তাদের মতে, বাঙালি মুসলিম মাত্রই বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী! অথচ সত্য ইতিহাস বলে এটা স্পষ্ট অপপ্রচার। কিন্তু এমন মিথ্যা অপপ্রচার কয়েক দশক ধরে চলতে চলতে আজ সেখানকার মুসলমানদের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে।
রাষ্ট্রযন্ত্র এবং সংখ্যাগুরু অসমীয়াদের এমন বিদ্বেষ এবং জিঘাংসার একমাত্র ভিকটিম হচ্ছে বাঙালি মুসলিমরা। আজ আসাম এমন এক উপত্যকা, যেখানে বাঙালি মুসলিমদের নিরাপত্তা সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।
এখানে আমরা জানবো আসামে ইসলামের আবির্ভাব, অবৈধ বাংলাদেশী তত্ত্ব, আসামের মুসলিমদের বিভাজন ও আসামীয় দের চাওয়া সম্পর্কে।
ইসলাম ও আসাম!
আসামে বর্তমান মুসলিম জনসংখ্যা হলো মোট জনগোষ্ঠীর ৪০%। আসামের মোট মুসলিম জনসংখ্যা ১ কোটি ৪০ লাখ।
অদূর ভবিষ্যতে আসাম একটি মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ প্রদেশ হবে বলেই বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছে। ১৯৫১ সালে এই প্রদেশের মুসলিম জনসংখ্যা ২৪% হলেও ৭০ বছরের ব্যবধানে তা বেড়ে ৪০% এ পৌঁছেছে। ভারতীয় বিভিন্ন জনমিতি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০৫০ সালের মধ্যে আসাম মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ প্রদেশ হবে।
আসামে ইসলাম প্রচার কিভাবে হয়?
আসাম মধ্যযুগে কখনোই মুসলিম শাসকদের অধীনে পুরোপুরি আসে নি। আসামের উপর ১২০৬ সালে বখতিয়ার খিলজির অভিযান, ১৪৯৮ সালে আলাউদ্দিন হুসেইন শাহের অভিযান, ১৫২৭ সালে নুসরত শাহের অভিযান, ১৫৩২ সালে তবারক খানের অভিযানের কোনোটিই পুরোপুরি সাফল্য বয়ে আনেনি। ফলে দীর্ঘকাল বাংলার পাশ্ববর্তী এই অঞ্চলটি অহোম রাজাদের অধীনেই ছিলো।
অবশেষে মোঘল সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠ বাদশাহ আওরঙ্গজেব আলমগীরের আমলে আসামের রাজধানী সর্বপ্রথম মুসলমানদের করায়ত্ত হয়। বাংলার সুবাদার মীর জুমলার অভিযানের মাধ্যমে ১৬৬২ সালে আসামের পার্বত্য অঞ্চল বাদে পুরোটা মোঘলদের অধীনে আসে। অবশ্য এই বিজয় বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ১৬৬৩ সালে আসান থেকে ঢাকায় আসার পথে মীর জুমলা মৃত্যুবরণ করে।
মীর জুমলার ইন্তেকালের সুযোগে অহোম রাজা আবার পুনরায় আসাম দখল করে। আসাম পুনরুদ্ধারে আওরঙ্গজেব এবার রামসিংহের নেতৃত্বে সৈন্য পাঠান। কিন্তু বারকয়েক যুদ্ধের পর ১৬৭১ সালে চূড়ান্তভাবে অহোম রাজাদের কাছে পরাজিত হন রামসিংহ। আর আওরঙ্গজেব ও এদিকে দাক্ষিণাত্য নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় আসামের দিকে আর মনোনিবেশ করার সুযোগ পাননি।
বলা যায়, মোঘল আমল বা এর আগের সুলতানি আমল কখনোই আসামে দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই কেন্দ্রীয় বা মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
অহোম রাজারা ১৮১৫ সাল পর্যন্ত বলতে গেলে নিজেদের সার্বভৌমত্ব বজায় রেখে রাজত্ব পরিচালনা করেন। অবশ্য আসামের পাশ্ববর্তী কোচ রাজ্যটি মোঘল আমলে মোঘলদের করদ রাজ্য ছিলো। ১৮১৫ সালে বার্মিজ রাজা কর্তৃক পরাজয়ের মাধ্যমে আসামে সর্বপ্রথম বাহিরের শক্তির আগমন ঘটে। এরপর ১৮২৬ সালে ব্রিটিশরাজ কর্তৃক বার্মিজ রাজাদের পরাস্ত করার মধ্য দিয়ে আসামে আগমন হয় ব্রিটিশ শাসনের। এভাবেই ১৮২৬ সালে সর্বপ্রথম ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে আসে আসাম।
ইতিহাস থেকে আমরা দেখতে পাই, মধ্যযুগের সুদীর্ঘ সময়ে সমগ্র আসাম স্থায়ীভাবে মুসলমানদের শাসনে আসেনি। আসামের কিছু কিছু অঞ্চল ক্ষণিকের জন্য মুসলিম শাসনাধীন ছিলো। এই সময়ে তাই রাজশক্তির মাধ্যমে আসামে ইসলাম প্রচার ঘটেনি। মূলত সুফী দরবেশ, যুদ্ধে আগমনরত সৈনিক এবং মুসলিম ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে অসমীয়া জনগোষ্ঠীর একটা অংশ ইসলামের ছায়াতলে আসে।
অবৈধ বাংলাদেশী তত্ত্ব অপপ্রচার শুরু কিভাবে?
ব্রিটিশরা আসাম দখলের পরপরই আসামের পাহাড়ী অঞ্চলে চা চাষের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। কিন্তু আসামের জনসংখ্যা অত্যাধিক কম হওয়ায় বিহার, ছত্তিসগড় প্রদেশ থেকে অনেক শ্রমিক প্রদেশটিতে আনা হয়। আর এভাবেই আসামে বাহির অঞ্চলের মানুষের ব্যাপক আগমন শুরু হয়। যদিও বিহার, ছত্তিসগড় অঞ্চল থেকে আগত চা চাষীদের মধ্যে মুসলিম খুবই কম ছিলো।
আবার এই শ্রমিকদের খাদ্যের চাহিদা মিটানোর জন্য বেশ কিছু সংখ্যক কৃষক আসামে মাইগ্রেন্ট হয় তৎকালীন পূর্ববঙ্গ তথা আজকের বাংলাদেশ থেকে। এই পরিযায়ী কৃষকদের বেশিরভাগই ছিলেন আবার মুসলিম। আর এই মাইগ্রেশন কোনোমতেই অবৈধ বলা যায় না। কারণ তখন আসাম আর পূর্ববঙ্গ একই দেশ ছিলো।
আসামের জনমিতির সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসে পূর্ববঙ্গের বৃহত্তর রংপুর জেলার বিরাট অংশ এবং বৃহত্তর সিলেট জেলা ব্রিটিশরাজ কর্তৃক আসামকে প্রদান করার মাধ্যমে। রংপুরের গোয়ালপাড়া এবং ধুবড়ি নামক এলাকা পূর্ববঙ্গ থেকে আসামে প্রদান করা হলে, আসামে মুসলিম জনসংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। কারণ রংপুর হলো মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ এলাকা। গোয়ালপাড়া এবং ধুবড়ি জেলা ভেঙে বর্তমানে আসামে ৫ টি জেলা হয়েছে। ডব্লিউ ডব্লিউ হান্টারের ‘স্ট্যাটিস্টিক্যাল অ্যাকাউন্ট অব গোয়ালপাড়া’(পৃষ্ঠা ৩২-৩৪ ) থেকে জানা যায়, ১৮৭৪ সালে আসাম নতুন প্রদেশ গঠন হলে গোয়ালপাড়া জেলাটি আসামের অন্তর্ভুক্ত করে ব্রিটিশরা। সেই শুরু থেকেই বাঙালি মুসলিম অধ্যুষিত গোয়ালপাড়া জেলায় আসামের কর্তৃত্ব।
১৮৭৪ সালে ব্রিটিশ সরকার বাংলা'র অবিচ্ছেদ্য অংশ সিলেট কে বাংলা থেকে বের করে আসামের সাথে জুড়ে দেয়। আর তখন অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক নানা কারণে কিছু সংখ্যক বাংলাভাষী সিলেটিরা আসামে মাইগ্রেন্ট হতে শুরু করে।
১৯৪৭ এর আগ পর্যন্ত সিলেট আসামের অংশ ছিলো। তাই এই অঞ্চল ১৯৪৭ এর আগ পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই আসামে কিছু মানুষ স্থানান্তরিত হন। পাশাপাশি আসাম - বেঙ্গল রেলওয়েতে কাজ করার সুবাদেও অনেক বাঙালি আসামে আবাস গড়েন।
এছাড়াও আসামে বাঙালি সংখ্যা গরিষ্ঠ বরাক উপত্যকার তিনটি জেলা মূলত সিলেট জেলার সাড়ে তিন থানার সমন্বয়ে গঠিত। ১৯৪৭ সালের গণভোটে জিতার পরেও সিলেটের করিমগঞ্জ বাংলাদেশকে না দিয়ে ভারতকে দিয়ে দেয় ব্রিটিশরাজ।
অর্থাৎ ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার ৫ টি জেলা এবং বরাক উপত্যকার ৩ টি জেলা আসাম পেয়েছে মূলত পূর্ববঙ্গ তথা আজকের বাংলাদেশ থেকে।
আসামে উৎপাদিত চা সহ অন্যান্য পণ্যের আমদানি রপ্তানি বেশিরভাগই হতো চট্টগ্রাম বন্দর তথা বাংলাদেশের উপর দিয়ে। আর তাই স্বাভাবিকভাবেই বাণিজ্যিক কারণে বেশকিছু বাঙালি জনগোষ্ঠী আসামে মাইগ্রেন্ট হন।
আসামের ব্যাপক মুসলিম জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক শক্তির প্রমাণ হিসেবে ১৯৩৯ সালে আসামে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন মোহাম্মদ সাদুল্লাহ।
এভাবেই মূলত আসামে বাঙালি কমিউনিটি শক্তিশালী হয় এবং একটা উল্লেখযোগ্য ফিগারে পরিণত হয়ে ক্ষমতার শীর্ষে পর্যন্ত চলে যায় ব্রিটিশ আমলে। অর্থাৎ ব্রিটিশদের পূর্ববঙ্গের জেলাগুলো কাটাছেঁড়া করে আসামে দেওয়ার কারণে আসামেও মুসলিম কমিউনিটি শক্তিশালী হয়, এখানে কোনো ম্যাসিভ অনুপ্রবেশের ঘটনা ছিলো না ব্রিটিশ আমলেই, বাংলাদেশ আমলে তো অনুপ্রবেশ হওয়াটা অকল্পনীয়ই। মূলত বাঙালি মুসলিম তথা আসাম প্রদেশে মুসলমানদের সংখ্যাবৃদ্ধিই ক্রোধের কারণ হয়ে উঠে অসমীয়াদের বিশেষ করে অসমীয়া হিন্দুদের। ব্রিটিশ পরবর্তী আসামে তাই বাঙালি মুসলিম বিরোধী সেন্টিমেন্ট জোরদার হয়।
আসামের মুসলিম জনসংখ্যাকে মোটাদাগে দুইভাগে বিভক্ত করা হয়। ক) অসমীয়া খ) বাঙালি। অসমীয়া মুসলিমরা আবার তিনভাগে বিভক্ত। ক) মৌড়িয়া খ) গৌড়িয়া গ) দেশী।
মৌড়িয়া
আসামে ইসলামের আগমন হয় বখতিয়ার খিলজির তিব্বত অভিযানের মাধ্যমে। তিব্বত অভিযানকালে আসামের পথধরে বখতিয়ার খিলজি যাত্রা শুরু করেন। বঙ্গবিজয়ের এই বীর অবশ্য তিব্বত অভিযানে সফল হতে পারেননি। কিন্তু তার সৈন্যদলের একাংশ সে সময় আসামে থেকে যায়। তারাই আসামের বুকে প্রথম ইসলামের মশাল স্থাপন করে। এই সৈনিকরা আসামে বিবাহ করে স্থায়ীভাবে থেকে যায়। তাদের বংশধরেরা আসামে মৌড়িয়া মুসলিম নামে অভিহিত।
দেশী
আলী মেচ নামক এক অসমীয়া নাগরিক সে সময় বখতিয়ার খিলজির হাত ধরে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিব্বত অভিযানে তিনি বখতিয়ার খিলজিকে পথনির্দেশনাও দেন। আলী মেচ পরবর্তীতে আসামে ব্যাপক ইসলাম প্রচার করেন।
আলী মেচসহ আরো বেশকিছু মুসলিম সুফি দরবেশদের প্রচারণার ফলে স্থানীয় রাজবংশী, কোচ উপজাতির একটা অংশ ইসলাম গ্রহণ করে সেই ১৩ শতকের দিকে। আসামে এরা পরিচিত জোলা বা দেশীয় মুসলিম নামে।
গৌড়িয়া
১৫৩২ সালে তবারক খান বাংলার গৌড় অঞ্চল থেকে আসামে আক্রমণ চালায়। সেবারই প্রথমবারের মতো মুসলিম সৈনিকরা আসামে খানিকটা সফলতা পায়। তবারক খানের সাথে গৌড় এলাকা থেকে আসা কিছু মুসলিম আসামে থিঁতু হন। এরা পরিচিতি লাভ করেন গৌড়িয়া নামে।
খ) বাঙালি মুসলিম
আসামের মোট মুসলিম জনসংখ্যা ১ কোটি ৪০ লাখ। যার মধ্যে ১ কোটিই হলো বাঙালি মুসলিম। এই বাঙালি মুসলিমরা বরাক উপত্যকা এবং ব্রক্ষপুত্র উপত্যকায় থাকে। তারমধ্যে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার মুসলিমদের বহিরাগত বাঙালি হিসেবে চিহ্নিত করতে তৎপর আসামের শাসকগোষ্ঠী। আসামের মুসলমানদের বিরুদ্ধে বর্তমান ষড়যন্ত্র টা মূলত বাঙালি মুসলিমদের কেন্দ্র করেই।
ব্রিটিশ আমল থেকেই অসমীয়া জনগোষ্ঠীর একটি অংশের মধ্যে ধারণা পেয়ে বসে, অতিরিক্ত বাঙালি জনগণের কারণে অসমীয়ারা আসামে সংখ্যালঘু হয়ে পড়ছে। এতে করে একটা সময় আসামজুড়ে বাঙালি বিরোধী তীব্র সেন্টিমেন্ট গড়ে তোলে অসমীয়ারা।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আরেক দফা মাইগ্রেশনের কবলে পড়ে আসাম। যুদ্ধশেষে বেশিরভাগ বাংলাদেশী নিজ দেশে ফিরে গেলেও কিছু সংখ্যক বাংলাদেশী হিন্দু আসামে থেকে যায়। এই ঘটনার পর ( কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধনে ) আসামে বাঙালিবিরোধী সেন্টিমেন্ট আরো জোরদার হয়।
আশি এবং নব্বইয়ের দশকে আসামের বোরো জনগণ ( স্থানীয় একটি গোষ্ঠী ) বাঙালিদের উপর বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালায়৷ এতে আসামে কয়েক হাজার বাঙালি মারা যান, যার বেশিরভাগই মুসলিম।
আসামে ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চের আগ পর্যন্ত আগমনকারী সকল নাগরিককে ভারতীয় হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই তারিখের পর কেউ আসামে প্রবেশ করলে তাকে বহিরাগত হিসেবে সংজ্ঞায়িত করার বিধান রয়েছে। সে হিসেবে আসামে কোনো বাংলাদেশী মুসলিম থাকার প্রশ্নই আসে না। কারণ ১৯৪৭ সালের পর বাঙালি মুসলিমরা আর আসামে মাইগ্রেন্ট হওয়ার নজির পাওয়া যায় নি।
কিন্তু এরপরেও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এবং আসামের অসমীয়া সরকার প্রতিনিয়ত দাবি করছে, বাংলাদেশ থেকে মুসলিম আগমনের। তাদের দাবির স্বপক্ষে কোনো দালিলিক প্রমাণ না থাকলেও ক্রমাগত প্রোপাগাণ্ডা চালিয়ে তারা আজ মিথ্যাটাকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে অনেকটা সক্ষম হয়েছে।
অসমীয়রা কী চায়?
অসমীয়া জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের দাবি হলো এনআরসি করা। অর্থাৎ সরকার আসামের জনগণের তালিকা করবে। তালিকার বাইরে যারা থাকবে তারাই অবৈধ অভিবাসী, তাদের আসাম থেকে বের করে দিতে হবে। কংগ্রেস সরকার এনআরসি বিল পাশ করালেও কখনো নাগরিকত্বের তালিকা তৈরির কাজ করে নি। এতে করে কংগ্রেসের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে অসমীয়ারা।
এই বিরোধটা ছিলো অসমীয়া - বাঙালি বিরোধ। যা কোনো হিন্দু - মুসলিম বিরোধ নয়। কিন্তু ২০১৬ সালে বিজেপি আসামে সরকার গঠনের পর একটি নতুন বিল পাস করে সিটিজেনশিপ আমেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট " সিএএ " নামে। " সিএএ " আসাম জুড়ে বিরোধ আরো বাড়িয়ে তোলে এবং জাতিগত সমস্যা কে ধর্মীয় সমস্যায় পর্যবসিত করে।
" সিএএ " বিলের মূল কথা হলো, এনআরসির তালিকা থেকে বাদ গেলেও অমুসলিম জনগণ ভারতের নাগরিকত্ব পাবে। এই " সিএএ " বিলের বিরুদ্ধে শুধু যে মুসলিম সম্প্রদায় প্রতিবাদ জানিয়েছে তা নয়, অসমীয়া জনগোষ্ঠী ও এটি মেনে নেয়নি। অসমীয়াদের মতে আমরা অবৈধ অভিবাসী মুক্ত আসাম চাই, কেবল অবৈধ মুসলিম অভিবাসী নয়।
আসামে বর্তমানে মেজর ৪ টি পক্ষ গড়ে উঠেছেঃ i) অসমীয়া হিন্দু । এরা চায় হিন্দু-মুসলিম সব ধর্মের বাংলাভাষী লোককে অবৈধ অভিবাসী ঘোষণা করা হোক। ii) অসমীয়া মুসলিম। এরা এনআরসি নিয়ে চুপ। তবে সিএএ এর বিপক্ষে। iii) বাঙালি মুসলিম। এনআরসি করা হচ্ছে মূলত এই পক্ষকে বহিরাগত প্রমাণ করাতে। iv) বাঙালি হিন্দু। এনআরসিতে এদের ও বেশিরভাগ বহিরাগত হিসেবে উঠে আসছে। তবে এদের নাগরিকত্ব দিতে আলাদা করে " সিএএ " বিল তৈরি করেছে বিজেপি সরকার। আর এতে অসমীয়া জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশ ( হিন্দু + মুসলিম ) ক্ষুব্ধ।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, একসময়কার অসমীয়া - বাঙালি বিরোধ এখন অনেকটাই হিন্দু - মুসলিম বিরোধে রূপান্তরিত হয়েছে। বাঙালি আসামিদের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালানোর পূর্বে কিছু প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান ও জানা জরুরী। অসমীয়াদের যে ক্ষোভ অবৈধ বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ নিয়ে, তা কী আদ্য সত্যি নাকি কাল্পনিক? বাংলাদেশ থেকে কী সত্যি কোনো অনুপ্রবেশ ঘটেছে আসামে? এর সঠিক উত্তরই দিতে পারে কোটি আসামী বাঙালি মুসলমানদের নিরাপদ জীবন।
কুরবানি, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও বিধান। মুফতি শরীফ মোহাম্মদ সাঈদ
লন্ডনে সিম্পল রিজনের অফিস পরিদর্শন করলেন মুফতি সাইফুল ইসলাম
লিডসে শায়েখে বাঘা রহঃ-এর জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
লন্ডনের সভায় আলেমরা বি এ এস বি কমপ্লেক্সকে সহযোগিতার আহবান জানালেন।
বইঃ বশীর আহমদ শায়খে বাঘা রহঃ
বার্মিংহামে শায়েখে বাঘা রহঃ জীবন ও কর্ম শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত
বায়রাক্তার টিবি২ দীপ্তিমান করছে তুরস্কের ভাগ্য
জার্মানিতে বছরে শতাধিক মসজিদে হামলা; উদ্বিগ্ন মুসলিমরা
বুজুর্গ উমেদ খাঁ। চট্টগ্রাম পুনরুদ্ধারের মহানায়ক!
ডুরান্ড লাইন! পাক - আফগান দ্বন্দ্বের রেড লাইন!
ত্রিপুরা ও বাংলার ঐতিহাসিক সম্পর্ক | পর্ব ২
ত্রিপুরার সাথে ইসলাম এবং বাংলাদেশের সহস্র বছরের যোগসূত্রের সন্ধানে!
পূর্ব আফ্রিকায় পর্তুগিজ উপনিবেশ স্থাপন, শোষণ ও ফলাফল
আফ্রিকার বুকে পর্তুগীজ কলোনি স্থাপনের ইতিহাস।
ইউরোপ থেকে ভারতবর্ষের অবিচ্ছিন্ন জলপথ আবিষ্কার।
কুরবানি, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও বিধান। মুফতি শরীফ মোহাম্মদ সাঈদ
লন্ডনে সিম্পল রিজনের অফিস পরিদর্শন করলেন মুফতি সাইফুল ইসলাম
লিডসে শায়েখে বাঘা রহঃ-এর জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
লন্ডনের সভায় আলেমরা বি এ এস বি কমপ্লেক্সকে সহযোগিতার আহবান জানালেন।
বইঃ বশীর আহমদ শায়খে বাঘা রহঃ
বার্মিংহামে শায়েখে বাঘা রহঃ জীবন ও কর্ম শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত
বায়রাক্তার টিবি২ দীপ্তিমান করছে তুরস্কের ভাগ্য
জার্মানিতে বছরে শতাধিক মসজিদে হামলা; উদ্বিগ্ন মুসলিমরা
বুজুর্গ উমেদ খাঁ। চট্টগ্রাম পুনরুদ্ধারের মহানায়ক!
ডুরান্ড লাইন! পাক - আফগান দ্বন্দ্বের রেড লাইন!
ত্রিপুরা ও বাংলার ঐতিহাসিক সম্পর্ক | পর্ব ২
ত্রিপুরার সাথে ইসলাম এবং বাংলাদেশের সহস্র বছরের যোগসূত্রের সন্ধানে!
পূর্ব আফ্রিকায় পর্তুগিজ উপনিবেশ স্থাপন, শোষণ ও ফলাফল
আফ্রিকার বুকে পর্তুগীজ কলোনি স্থাপনের ইতিহাস।
ইউরোপ থেকে ভারতবর্ষের অবিচ্ছিন্ন জলপথ আবিষ্কার।