সর্বশেষ
  কুরবানি, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও বিধান। মুফতি শরীফ মোহাম্মদ সাঈদ   লন্ডনে সিম্পল রিজনের অফিস পরিদর্শন করলেন মুফতি সাইফুল ইসলাম   লিডসে শায়েখে বাঘা রহঃ-এর জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত   বার্মিংহামে শায়েখে বাঘা রহঃ জীবন ও কর্ম শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত   লন্ডনের সভায় আলেমরা বি এ এস বি কমপ্লেক্সকে সহযোগিতার আহবান জানালেন।   বইঃ বশীর আহমদ শায়খে বাঘা রহঃ   বায়রাক্তার টিবি২ দীপ্তিমান করছে তুরস্কের ভাগ্য   জার্মানিতে বছরে শতাধিক মসজিদে হামলা; উদ্বিগ্ন মুসলিমরা   বুজুর্গ উমেদ খাঁ। চট্টগ্রাম পুনরুদ্ধারের মহানায়ক!   ডুরান্ড লাইন! পাক - আফগান দ্বন্দ্বের রেড লাইন!   ত্রিপুরা ও বাংলার ঐতিহাসিক সম্পর্ক | পর্ব ২   ত্রিপুরার সাথে ইসলাম এবং বাংলাদেশের সহস্র বছরের যোগসূত্রের সন্ধানে!   আসামের বর্তমান পরিস্থিতি!   আসামে ইসলামের আগমন ও এন আর সি ক্রাইসিস।   নবাব নুর উদ্দিন মুহাম্মদ বাকের জং। ইতিহাসে ঠাঁই না পাওয়া বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব!   প্রাক-ইসলামিক আরব। ধর্ম, সমাজ ও সংস্কৃতি।   ইউরোপ থেকে ভারতবর্ষের অবিচ্ছিন্ন জলপথ আবিষ্কার।   আফ্রিকার বুকে পর্তুগীজ কলোনি স্থাপনের ইতিহাস।   পূর্ব আফ্রিকায় পর্তুগিজ উপনিবেশ স্থাপন, শোষণ ও ফলাফল   ধর্ষণের আলামত যেভাবে পরীক্ষা করা হয়।   মেটাভার্স   বাংলাদেশের সাথে সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে চায় তুরস্ক   লিবারেলিজম।   ইউরোপে ইসলাম বিদ্বেষের উত্থান।    পাকিস্তানে ইসলামী দল, তেহরিক-ই-লাব্বাইক নিষিদ্ধের ঘোষণা।   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব- ১১। নেতৃত্বের যোগ্যতা ও ব্যর্থ নেতৃত্ব।   ২০২০ সালের দিল্লি সহিংসতা ছিল একটি সংগঠিত, পরিকল্পিত ‘প্রোগ্রাম’। এবং কেন?   দ্যা রুম হোয়ার ইট হ্যাপেনড। বই রিভিউ। পর্ব-৭   দ্যা রুম হোয়ার ইট হ্যাপেনড। বই রিভিউ। পর্ব-৬   দ্যা রুম হোয়ার ইট হ্যাপেনড। বই রিভিউ। পর্ব-৫   ২০০২ সালের গুজরাট গণহত্যা ও নরেন্দ্র মোদি   দ্যা রুম হোয়ার ইট হ্যাপেনড। বই রিভিউ। পর্ব-৪   দ্যা রুম হোয়ার ইট হ্যাপেনড। বই রিভিউ। পর্ব-৩   দ্যা রুম হোয়ার ইট হ্যাপেনড। বই রিভিউ। পর্ব-২   দ্যা রুম হোয়ার ইট হ্যাপেনড। বই রিভিউ। পর্ব-১   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব- ১০   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব-৯   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব-৮   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব-৭   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব-৬   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব-৫   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব-৪   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব-৩   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব-২   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব-১   রিবা নির্মূল হতে পারে সীরাতের পন্থায়!   ১৯৯১ সালে কাশ্মীরের কুনান ও পোশপোরায় গণধর্ষণ। আজও বিচার হয়নি।   নজরদারি: ‘দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত’   ব্যবসার সঙ্গে অন্য সংস্কৃতিকে যুক্ত করার এজেন্ডা!

নজরদারি: ‘দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত’

৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৪:০১ অপরাহ্ণ

    শেয়ার করুন

সাইমন হুপার

মুহাম্মদ জানেন না, ২০১২ সালের মার্চ মাসের এক ভোরে ব্রিটিশ কাউন্টারটেররিজম পুলিশ কেন তার ইস্ট লন্ডনের ঘরের দরজায় এসে কড়া নেড়েছিল। ভোর সাড়ে পাঁচটা। সেদিন ছিল মুহাম্মদ ও তার স্ত্রীর তৃতীয় বিয়েবার্ষিকী। তাদের ছোট দুটি বাচ্চা কটে ঘুমিয়ে ছিল। সেদিন মুহাম্মদের বয়স্ক বাবা-মা তাদের ঘরে বেড়াতে এসেছিলেন। মুহাম্মদ বলেন, হঠাৎ আমার মা আমাকে জাগিয়ে তোলেন এই বলে, ‘জলদি ওঠো, জলদি ওঠো! দেখো দরজায় পুলিশ নক করছে। আমার স্ত্রী ওড়না পরলেন এবং আমরা সবাই আমাদের বসার ঘরে চলে এলাম। মুহাম্মাদ আল-জাজিরাকে এসব কথা বলছিলেন। তিনি অনুরোধ করেন, আইনি ঝামেলার কারণে শুধুমাত্র তার নামের প্রথম অংশ যেন প্রকাশ করা হয়।

মুহাম্মদ বলেন, আমি গুণে গুণে দেখি আমাদের বসার ঘরে ১২ জন পুলিশ অফিসার। অন্যরুমে আরও পুলিশের নড়াচড়ার শব্দ শুনতে পেলাম। পুলিশ বললো, তাদের কাছে ওয়ারেন্ট আছে আমার ঘর ও গাড়ি তল্লাশি করার। পুলিশ যখন মুহাম্মদের ঘরে-বাইরে তল্লাশি চালাচ্ছিল, তখন তার বাবার হার্ট এট্যাক হয়। অ্যাম্বুলেন্স ডেকে বাবাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরদিন দুইটায় পুলিশ বিদায় নেয়। যাওয়ার কালে তারা মুহাম্মদের টাকা-পয়সা, জরুরী কাগজপত্র, ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র, ফোন এবং পাসপোর্ট সব নিয়ে যায়।

মুহাম্মদ বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত একজন ব্রিটিশ মুসলিম। বয়স বিশ বছর। পুলিশ তার ঘরে রেইড দিয়ে তাকে গ্রেফতার, জেলে ঢুকানো কিংবা জেরা এসব কিছুই করেনি। মুহাম্মদের বাবা হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেন। তবে এই ঘটনা তার জীবনকে তছনছ করে দেয়।

মুহাম্মদ যখন একজন গাইড হিসেবে ব্রিটিশ হজ্বযাত্রীদের নিয়ে সৌদি আরব যান, তখন। তাকে প্রত্যেকবার কাউন্টার টেররিজমের ‘শিডিউল সেভেন’ আইনের ক্ষমতাবলে আটক করে জেরা করা হয়। এটা তার কাজকর্মকে অসম্ভব করে তুলেছে। তিনি বলেন, গত বছর অক্টোবরে রিয়াদ এয়ারপোর্টে তাকে ২৬ ঘন্টা আটকে রাখা হয়। তারপর কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই ব্রিটেন ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

চরবৃত্তির জন্য বলপ্রয়োগ

গত আগষ্ট মাসে মুহাম্মদকে লন্ডনের একটি পুলিশ স্টেশনে যাওয়ার জন্য ডাকা হয়। তার টাকা-পয়সা ও অন্যান্য জিনিস নিয়ে যেতে বলা হয়, যা দেড় বছর পূর্বে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। মুহাম্মদ বলেন, এসও ফিফটিন (লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ কাউন্টার টেররিজম ইউনিট)-এর দুইজন অফিসার আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। এটা জানা কথা, তারা ভালো পুলিশ খারাপ পুলিশ-এই খেলা সবসময় খেলে থাকে। সেদিন তারা দুজন ভালো পুলিশ পুলিশ খেলা খেলছিল। তারা অতি সাধারণ বিষয় নিয়ে কথা বলে। যখন আমি বেরিয়ে যাব, তখন তারা বলে উঠে, ‘দাঁড়াও! ওখানে একজন আছেন যিনি তোমার সাথে কিছু কথা বলতে চান।' মুহাম্মদকে একটি রুম দেখিয়ে দেওয়া হল। সেখানে দু’জন লোক বসা ছিলেন। মুহাম্মদ বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন এই দু’জন ‘এমআই ফাইভে’র জন্য কাজ করে। এমআই ফাইভ’ হল, ব্রিটেনের অভ্যন্তরীণ সিকিউরিটি সার্ভিস। তিনি বলেন, তারা তাকে বলপ্রইয়োগ এবং প্রলোভনের মাধ্যমে তথ্য দেওয়ার ব্যাপারে রাজি করাতে চেষ্টা করে। মুহাম্মদ বলেন, অফিসার আমাকে আমার বন্ধুদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। সিরিয়ার ব্যাপারে এবং এইরকম বিষয়ে আমার কাছে জানতে চায়। অফিসার বলেন, তারা মনে করেন, এমন অনেক লোক আছে, যারা ফিরে এসে ব্রিটেনে দাঙ্গা লাগাতে চায়। আমি বলি, সিরিয়া যাওয়ার পরিকল্পনা আমার কোন কালে ছিল না। তারা একটি ফোন নাম্বার দিয়ে বলে, কোনো খবর পেলে সরাসরি আমাদের জানিও।

সিভিল সিকিউরিটি গ্রুপ কেইজ (CAGE) এর মতে, মুহাম্মদের কাহিনী কেবল একটিমাত্র কেইস যা ব্যাখ্যা করে কাউন্টার টেররিজম পলিসির মাধ্যমে কী পরিমাণ ব্রিটিশ মুসলিমকে ফাঁদে ফেলা হচ্ছে। অন্যায়ভাবে প্রতিনিয়ত তাদের টার্গেট বানানো হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে, তারা উগ্রবাদীতায় বিশ্বাসী হয়ে যাচ্ছে।

গত জানুয়ারিতে ব্রিটিশ সরকারের ‘প্রিভেন্ট কাউন্টার টেররিজম পলিসি'র ব্যাপারে কেইজের একটি রিপার্ট প্রকাশিত হয়। যেখানে তারা সতর্ক করে বলে, মুসলিম কম্যুনিটিকে ‘দুলনা থেকে কবর পর্যন্ত নজরদারি আর বৈষম্যের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এটা স্নায়ু যুদ্ধকালীন সময়ে সন্দেহভাজন কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত আমেরিকার পলিসিকেও ছাড়িয়ে যাবে।

‘কেইজে’র রিপোর্টটি ফোকাস করেছে, কীভাবে বাধা প্রদানের মাধ্যমে মসজিদ, মুসলিম প্রতিষ্ঠান এবং চ্যারিটি সংস্থাগুলোকে সিকিউরিটির আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। পাবলিক অফিসিয়াল, যেমন- শিক্ষক, ইমাম, লেকচারার এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে কোনো ছাত্র অথবা রোগীকে মৌলবাদী হওয়ার ঝুঁকিতে দেখলে তথ্য দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

কেইজ (CAGE) এর ডিরেক্টর হলেন মুয়াযযাম বেগ। যাকে সিরিয়ার সশস্ত্রগোষ্ঠীদের সাথে সম্পর্ক থাকার অভিযোগে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে বেগ গোয়ান্তামো বে কারাগারে বন্দী ছিলেন। ২০০২ সালে আমেরিকা তাকে পাকিস্তান থেকে গ্রেফতার করে। ২০০৫ সালে তিনি কোন চার্জ ছাড়াই কিউবার আমেরিকান প্রিজন ক্যাম্প থেকে ছাড়া পান। ডিসেম্বর মাসে বেগ ব্রিটিশ সরকার এবং তার সিকিউরিটি সংস্থার মাধ্যমে কীভাবে নিগৃহীত হয়েছেন সে কথা লিখলেন। তারপর বেগের পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়, কারণ ব্রিটিশ সরকার যেসব দুষ্কর্মে সহযোগীতা দিয়েছিল তার অনুসন্ধান তিনি করছিলেন। এর মধ্যে সিরিয়ায় ত্রাণ পাঠানোও একটি কারণ।

এক বিবৃতিতে কেইজ দাবি করেছে, আটক করার মাধ্যমে বেগের উপর অত্যাচার চালানো হয়েছে। তারা বলে, আমরা যেকোন ধরণের সন্ত্রাসের সাথে মুয়াযযাম বেগের সম্পৃক্ততা বিশ্বাস করি না। সহজ কথায় তিনি সেসব ব্যক্তি ও চ্যারিটির মধ্যে একজন যারা সিরিয়ার জন্য কাজ করার ফলে সন্দেহের চোখে দেখা হয়। এটা বিশাল মুসলিম কম্যুনিটিকে এই বার্তা দেয়া যে, সিরিয়ার জন্য তাদের কাজ করতে যাওয়া হল 'নো গো এরিয়া'।

কেইজে’র রিপোর্টে একটি বালকের কথা বলা হয়েছে, যার বয়স মাত্র নয় বছর। যাকে উগ্রবাদের সাইন দেখানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। পুলিশ পরিসংখ্যানে দেখা যায় তরুণ যুবকদের ব্যাপারে তথ্য দেয়ার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১২-২০১৩ সালে ৭৪৮ টি তথ্য এসেসমেন্ট পর্যায়ে যায়। এর আগের বছর যা ছিল ৫৮০। ২০০৬ সাল থেকে সর্বমোট ২৬০০-এর বেশি।

অন্যদিকে মুসলিম কম্যুনিটির জন্য প্রতিষ্ঠিত যেসব ইয়ুথ গ্রুপ এবং মেন্টাল হেলথ প্রোজেক্ট সরকারের পক্ষ থেকে পাবলিক ফান্ড পায়, তাদেরকে এই শর্ত মানতে হয় যে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে তারা তথ্য প্রদান করবে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সংগঠনগুলোকে তাদের সদস্য লিস্ট এবং অন্যান্য তথ্য কাউন্টার টেররিজম পুলিশকে দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়।

রিপোর্টটির সহকারী লেখক আলজাজিরাকে বলেন, ম্যাককারথির সময়ের আটক পলিসির মতো কোনো পলিসির উদাহরণ হয় না। কিন্তু এই আটক শুধু আটক থাকে না, আরও সামনে চলে যায়। তিনি আরও বলেন, গ্রেফতার মুসলিম কম্যুনিটিতে ভয় আর উন্মত্ততা নিয়ে এসেছে। মানুষ মনে করছে, তারা এ বিষয় নিয়ে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না এবং তাদের কোন অধিকার নেই।

গত মে'তে ব্রিটিশ সেনা লি রাগবিকে হত্যার পর ব্রিটেনের কাউন্টার টেররিজম আইন নিয়ে সাম্প্রতিক একটি পরিকল্পনা করা হয়। ব্রিটিশ মুসলমানদের সিরিয়া সফরের কারণে বর্তমানে নিরাপত্তা ঝুঁকির ব্যাপারে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। সুতরাং এসব কারণে বাধা দানের প্রবণতাকে আরও কঠোর করে তুলবে।

ব্রিটিশ হোম সেক্রেটারী থেরেসা মে গত ডিসেম্বরে নতুন একটি আইনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন, যা হবে আরও কঠোর। যেটি লোকাল কর্তৃপক্ষ, মসজিদ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ওপর কঠোর হস্তক্ষেপে আইনি কোনো বাধা থাকবে না। আর নতুন এই আইনকে আইনের মাধ্যমেই জোরপূর্বক বাস্তবায়ন করা হবে।

সমালোচকরা বলছেন, নতুন রক্ষণশীল আদর্শের মাধ্যমে যেসব বাধা প্রদান বা হস্তক্ষেপের আইন করা হচ্ছে, এসব আইন আখেরে ইসলামকে নিয়ে সশস্ত্র বিপ্লবের প্রবণতা বাড়িয়ে দিবে।

কেইজের রিপোর্টে বলা হয়, ইসলামকে পলিটিক্যাল ফরমেশনে উপস্থাপন করে শিক্ষক, ডাক্তার, পুলিশ অফিসার, সিভিল সদস্য এবং লোকাল সরকারী অফিসারদেরকে ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। এটা সেই পলিসি, যেটা তৈরি করা হয়েছে, মুসলমানদের তাদের বিশ্বাসের প্রতি শিথিল ও বিমুখ হতে। সহজ কথায়, এটা ভিন্ন মতের রাজনীতিকে এবং রাজনৈতিক চিন্তাকে ধ্বংশ করে।

বিচ্ছিন্নতা

হস্তক্ষেপ বা বাধাদানকারী পলিসির সাথে যুক্ত অনেকেই মনে করেন, এই পলিসি ইতিমধ্যে প্রমাণ করেছে যে, এটি মুসলিম কম্যুনিটিকে সংযুক্ত করার বদলে বিচ্ছিন্ন করে দিবে।  রেডব্রিজ ইসলামিক সেন্টার ইস্ট লন্ডনের ইমাম শাকুর রাহমান আল-জাজিরাকে বলেন, তিনি এবং মসজিদের অন্যান্য কর্মকর্তাদের সাথে প্রিভেন্ট অফিসাররা নিয়মিত দেখা করে। জনাব রহমান বলেন, কিছু লোক এসে এই দাবী করে যে তারা স্পেশাল ব্রাঞ্চ (SO15) এর পক্ষ থেকে এসেছে। তারা ইমামের সাথে মিটিং করতে চায়। তারা ইমামদের বলে, আমাদের সহযোগীতা করুন, না হয় আপনাদের জীবন দুর্বিসহ করে তোলা হবে। তারা বলে, আমরা তোমাদের ওপর নজরদারি করছি। আমাদের চোখ তোমাদের উপর আছে এবং আমাদের কান সবসময় মাটিতে থাকবে। আপনি এমন কিছু লোক দেখবেন, যারা কম্যুনিটির সাথে মিশে আজব সব প্রশ্ন করছে। তারা যেকোনো সময় আসে এবং গায়েবও হয়ে যায়।

ইমাম শাকুর রহমান আরও বলেন, আমরা জানি। আসলে প্রত্যেক ইমামই জানেন যে, আপনি যদি এমন কিছু বলেন, যা তারা পছন্দ করে না। তাহলে সেদিন রাতেই আপনার ঘরে রেইড হবে। তারা ভীতি সৃষ্টি করতে চাইছে, যাতে আমরা কিছু মৌলিক ইস্যু নিয়ে কথা বলতে না পারি। যেসব আমাদের কম্যুনিটিকে বিভক্ত করতে পারে। যদি প্রিভেন্টের (বাধাদান) প্রকৃত উদ্দেশ্য থাকে, কম্যুনিটি থেকে সমস্যা দূর করা, তাহলে এটা তার সম্পূর্ণ উল্টো কাজ করে যাচ্ছে। আল-জাজিরা লন্ডন অফিস বারাহ অব রেডব্রিজের প্রিভেন্ট অফিসারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। কাউন্সিলের এক কর্তাব্যক্তি বলেন, প্রিভেন্টের ব্যাপারে জানতে হলে সরাসরি হোম অফিসের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

এদিকে হোম অফিসের একজন কর্মকর্তা আল-জাজিরাকে বলেন, আমাদের বাধাপ্রদান নীতি চরমপন্থি মতাদর্শকে চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দেয়। প্রতিষ্ঠানগুলোকে চরমপন্থা থেকে বাঁচিয়ে রাখে। সাধারণ জনগণকে র‍্যাডিকাল হতে দেয় না। হোম অফিসের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, আমরা লোকাল অথরিটির সাথে ঘনিষ্টভাবে কাজ করি। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংস্থা এবং অন্যান্য গ্রুপের সাথেও কাজ করি। আমরা তাদের এই নিশ্চয়তা দেই যে, তারা প্রয়োজনীয় সহায়তা এবং পরামর্শ পাবে। এছাড়া আমরা লোকাল কম্যুনিটিকে চরমপন্থীদের মোকাবেলা করার জন্য সরাসরি সহায়তা দিচ্ছি।

ব্রিটিশ সরকারের নীতি হল, যারা এ ব্যাপারে কথা বলেন তাদের নাম উল্লেখ না করা।

নজরদারির নেপথ্যে

মুহাম্মদ মনে করেন, তার ঘরে পুলিশি তল্লাশীর একমাত্র কারণ হল, রেইড দেয়ার আগের শুক্রবারে তিনি লোকাল মসজিদে সিরিয়ার জন্য পয়সা তুলেছিলেন। মুহাম্মদ বলেন, সেখানে একদল ভাই আমাকে তাদের একটি দানবাক্স নিয়ে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেন।

মুহাম্মদের ধারণা, হয়তো MI5 সে মসজিদে কারও উপর নজরদারি করছিল। আর সে হয়তো ওই ব্যক্তির পাশে ছিল। এভাবে তাকে জড়িয়ে ফেলা হয়। মুহাম্মদ বলেন, এই রেইড আমাকে মসজিদে যেতে ভীত করে তুলেছে। আমি মনে মনে ভাবি, যদি মসজিদে যাই, আর মসজিদে যাওয়া-আসাটা যদি পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে।

মুহাম্মদ বিশ্বাস করেন, তিনি এখনও নজরদারির মধ্যে আছেন। সে ট্রাডিশনাল ইসলামিক পোশাকের পরিবর্তে সাধারণ পোশাক পড়তে শুরু করেছে। সে ভাবছে, এতে করে তার উপর থেকে মনযোগ সরবে। মুহাম্মদ নিয়মিত অপরিচিত নম্বর থেকে তার ফোনে কল পায়। কিন্তু কল রিসিভ করার পর কেউ কথা বলে না।

মুহাম্মদ বলেন, আজ রাতে যখন আমি ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য এখানে এসেছি। দেখলাম, এখানেও একটি কার পার্ক করা। এটা অনুমান করুন, পুলিশ যখন গোপন থাকে, তখন তাদের কেমন দেখায়?

আমার পিছনে MI5 লেগেছে। SO15 আমার জিনিসপত্র-কাগজপত্র নিয়ে যাচ্ছে। আমি নিজেকে নিয়ে খুবই ভীত। সর্বশেষ আমার নিজের উপর একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন থেকে যায়, কারণ আমি জানি না, আমার কী হবে?

(আল-জাজিরা অনলাইনে প্রকাশিত সাইমন হুপারের ‘সার্ভেলিং ইউকে মুসলিম ‘ক্রেডল টু গ্রেভ’ অবলম্বনে ইংরেজী থেকে অনূদিত। অনুবাদ করেছেন হোসাইন আহমদ। ২০১৪ সালের এপ্রিলে মাসিক আল-আহরারে প্রথম প্রকাশিত হয়।) 

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

কুরবানি, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও বিধান। মুফতি শরীফ মোহাম্মদ সাঈদ

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

লন্ডনে সিম্পল রিজনের অফিস পরিদর্শন করলেন মুফতি সাইফুল ইসলাম

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

লিডসে শায়েখে বাঘা রহঃ-এর জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

লন্ডনের সভায় আলেমরা বি এ এস বি কমপ্লেক্সকে সহযোগিতার আহবান জানালেন।

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

বইঃ বশীর আহমদ শায়খে বাঘা রহঃ

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

বার্মিংহামে শায়েখে বাঘা রহঃ জীবন ও কর্ম শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

বায়রাক্তার টিবি২ দীপ্তিমান করছে তুরস্কের ভাগ্য

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

জার্মানিতে বছরে শতাধিক মসজিদে হামলা; উদ্বিগ্ন মুসলিমরা

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

বুজুর্গ উমেদ খাঁ। চট্টগ্রাম পুনরুদ্ধারের মহানায়ক!

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

ডুরান্ড লাইন! পাক - আফগান দ্বন্দ্বের রেড লাইন!

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

ত্রিপুরা ও বাংলার ঐতিহাসিক সম্পর্ক | পর্ব ২

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

ত্রিপুরার সাথে ইসলাম এবং বাংলাদেশের সহস্র বছরের যোগসূত্রের সন্ধানে!

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

পূর্ব আফ্রিকায় পর্তুগিজ উপনিবেশ স্থাপন, শোষণ ও ফলাফল

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

আফ্রিকার বুকে পর্তুগীজ কলোনি স্থাপনের ইতিহাস।

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

ইউরোপ থেকে ভারতবর্ষের অবিচ্ছিন্ন জলপথ আবিষ্কার।

the global affairs google play logo the global affairs apple logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ হোসাইন আহমদ

info@theglobalaffairs.info