সর্বশেষ
  কুরবানি, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও বিধান। মুফতি শরীফ মোহাম্মদ সাঈদ   লন্ডনে সিম্পল রিজনের অফিস পরিদর্শন করলেন মুফতি সাইফুল ইসলাম   লিডসে শায়েখে বাঘা রহঃ-এর জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত   বার্মিংহামে শায়েখে বাঘা রহঃ জীবন ও কর্ম শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত   লন্ডনের সভায় আলেমরা বি এ এস বি কমপ্লেক্সকে সহযোগিতার আহবান জানালেন।   বইঃ বশীর আহমদ শায়খে বাঘা রহঃ   বায়রাক্তার টিবি২ দীপ্তিমান করছে তুরস্কের ভাগ্য   জার্মানিতে বছরে শতাধিক মসজিদে হামলা; উদ্বিগ্ন মুসলিমরা   বুজুর্গ উমেদ খাঁ। চট্টগ্রাম পুনরুদ্ধারের মহানায়ক!   ডুরান্ড লাইন! পাক - আফগান দ্বন্দ্বের রেড লাইন!   ত্রিপুরা ও বাংলার ঐতিহাসিক সম্পর্ক | পর্ব ২   ত্রিপুরার সাথে ইসলাম এবং বাংলাদেশের সহস্র বছরের যোগসূত্রের সন্ধানে!   আসামের বর্তমান পরিস্থিতি!   আসামে ইসলামের আগমন ও এন আর সি ক্রাইসিস।   নবাব নুর উদ্দিন মুহাম্মদ বাকের জং। ইতিহাসে ঠাঁই না পাওয়া বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব!   প্রাক-ইসলামিক আরব। ধর্ম, সমাজ ও সংস্কৃতি।   ইউরোপ থেকে ভারতবর্ষের অবিচ্ছিন্ন জলপথ আবিষ্কার।   আফ্রিকার বুকে পর্তুগীজ কলোনি স্থাপনের ইতিহাস।   পূর্ব আফ্রিকায় পর্তুগিজ উপনিবেশ স্থাপন, শোষণ ও ফলাফল   ধর্ষণের আলামত যেভাবে পরীক্ষা করা হয়।   মেটাভার্স   বাংলাদেশের সাথে সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে চায় তুরস্ক   লিবারেলিজম।   ইউরোপে ইসলাম বিদ্বেষের উত্থান।    পাকিস্তানে ইসলামী দল, তেহরিক-ই-লাব্বাইক নিষিদ্ধের ঘোষণা।   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব- ১১। নেতৃত্বের যোগ্যতা ও ব্যর্থ নেতৃত্ব।   ২০২০ সালের দিল্লি সহিংসতা ছিল একটি সংগঠিত, পরিকল্পিত ‘প্রোগ্রাম’। এবং কেন?   দ্যা রুম হোয়ার ইট হ্যাপেনড। বই রিভিউ। পর্ব-৭   দ্যা রুম হোয়ার ইট হ্যাপেনড। বই রিভিউ। পর্ব-৬   দ্যা রুম হোয়ার ইট হ্যাপেনড। বই রিভিউ। পর্ব-৫   ২০০২ সালের গুজরাট গণহত্যা ও নরেন্দ্র মোদি   দ্যা রুম হোয়ার ইট হ্যাপেনড। বই রিভিউ। পর্ব-৪   দ্যা রুম হোয়ার ইট হ্যাপেনড। বই রিভিউ। পর্ব-৩   দ্যা রুম হোয়ার ইট হ্যাপেনড। বই রিভিউ। পর্ব-২   দ্যা রুম হোয়ার ইট হ্যাপেনড। বই রিভিউ। পর্ব-১   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব- ১০   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব-৯   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব-৮   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব-৭   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব-৬   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব-৫   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব-৪   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব-৩   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব-২   মুকাদ্দিমাহ রিভিউ। পর্ব-১   রিবা নির্মূল হতে পারে সীরাতের পন্থায়!   ১৯৯১ সালে কাশ্মীরের কুনান ও পোশপোরায় গণধর্ষণ। আজও বিচার হয়নি।   নজরদারি: ‘দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত’   ব্যবসার সঙ্গে অন্য সংস্কৃতিকে যুক্ত করার এজেন্ডা!

আসামের বর্তমান পরিস্থিতি!

২৩ নভেম্বর ২০২১ ০৬:২৪ অপরাহ্ণ

    শেয়ার করুন

সাইফুদ্দীন আহমদ।

আসামে মুসলিম অনুপ্রবেশকারী তত্ত্ব সত্য-মিথ্যা।

এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম প্রদেশ আসাম। আসামের বর্তমান পরিস্থিতি বুঝতে প্রথমে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন তাদের নৃতাত্ত্বিক পরিচয় ও জনমিতির দিকে। আসামের মোট জনসংখ্যার ৪৮% কথা বলেন অসমীয়া ভাষায়, আর ২৮% জনগণ কথা বলেন বাংলা ভাষায়। অপরদিকে আসামের মুসলিম জনসংখ্যা বর্তমানে মোট জনসংখ্যার ৪০%। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, আসামে বাংলা ভাষী ছাড়াও ব্যাপক অসমীয়া ভাষী মুসলিম রয়েছে। পাশাপাশি বাংলা ভাষী সবাই ইসলাম ধর্মাবলম্বী নন। আসামে বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হিন্দুও রয়েছে। কিন্তু তারপরেও আসামে এখন বাংলা ভাষী বলতেই মুসলিম বুঝানো হচ্ছে, আরো স্পষ্ট করে বললে তাদেরকে উপস্থাপন করা হচ্ছে অবৈধ বাংলাদেশী মুসলিম হিসেবে।

আসাম রাজ্যের বরাক উপত্যকাটি সম্পূর্ণভাবে বাঙালি মুসলিম অধ্যুষিত। অপরদিকে ব্ৰহ্মপুত্ৰ ভ্যালির কিছু জেলা মুসলিম ( বাঙালি + অসমিয়া )  অধ্যুষিত আর বাকি জেলাসমূহ অসমীয়া হিন্দু  এবং উপজাতি হিন্দু অধ্যুষিত। এছাড়াও বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায় বরাক উপত্যকার একটা জেলায় সংখ্যাগুরু এবং বাকি আসামজুড়ে ছড়িয়ে আছে।

আসামে সর্বমোট মুসলিম ১ কোটি ৪০ লাখ। যারমধ্যে বাঙালি মুসলিম ৯৭ লাখ আর বাকি ৪৩ লাখ অসমীয়া জাতির মুসলিম। এই ৪৩ লাখ মুসলিমের জাতীয়তা নিয়ে অসমীয়া জাতীয়তাবাদীদের অসুবিধা নেই। অসমীয়া মুসলমানদেরকে বহিরাগত মনে করে না- অসমীয়া জাতীয়তাবাদীরা। অসমীয়াদের প্রধান সমস্যাটা হচ্ছে ৯৭ লাখ বাঙালি মুসলমানকে নিয়ে এবং বেশিরভাগ অসমীয়ারা হিন্দু বাঙালিদেরকেও আসাম থেকে বিতাড়িত করতে চায়। তবে ক্ষমতাসীন বিজেপির ভিন্ন রাজনৈতিক পলিসির কারণে আপাতত অসমীয়া জাতীয়তাবাদীদের দৃষ্টি বাঙালি মুসলমান বিতাড়নের দিকে। বিজেপি সফলভাবে জাতীয়তাবাদী সমস্যাকে ধর্মীয় সমস্যায় রূপান্তরিত করেছে।

সাবেক সিলেট জেলার  অন্তর্গত বরাক উপত্যকার তিনটি জেলার মধ্যে ২টিতে বাঙালি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং ১ টিতে বাঙালি হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ।

ক) হাইলাকান্দি জেলা (ধর্মীয়ভাবে যার ৬০% মুসলিম। জাতিগতভাবে ৮৫% বাঙালি এবং ৭% হিন্দিভাষী। )

খ) করিমগঞ্জ জেলা (ধর্মীয়ভাবে যার ৫৭% মুসলিম। জাতিগতভাবে ৮৭% বাঙালি এবং ৬% হিন্দিভাষী। )

গ) কাছাড় জেলা ( ধর্মীয়ভাবে ৩৮% মুসলিম। জাতিগতভাবে ৭৫% বাঙালি এবং ৯% হিন্দিভাষী। )

লোয়ার আসামের ১২ টি জেলার মধ্যে মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ জেলা ৫ টি।

ক)ধুবড়ি জেলা (ধর্মীয়ভাবে ৮০% মুসলিম। জাতিগতভাবে ৩০% বাঙালি এবং ৬৬% অসমীয়া )

খ) বড়পেটা জেলা (ধর্মীয়ভাবে ৭১% মুসলিম। জাতিগতভাবে ৬২% বাঙালি এবং ৩৬% অসমীয়া)  

গ) গোয়ালপাড়া জেলা (ধর্মীয়ভাবে ৫৮% মুসলিম। জাতিগতভাবে ৩০% বাঙালি এবং ৫২% অসমীয়া)  

ঘ) বনগাইগাঁও (ধর্মীয়ভাবে ৫০% মুসলিম। জাতিগতভাবে ৪৫% বাঙালি এবং ৫০% অসমীয়া )

ঙ) সাউথ সালমারা জেলা (ধর্মীয়ভাবে ৯৫% মুসলিম। জাতিগতভাবে ৪০% বাঙালি এবং ৫৯% অসমীয়া)

এছাড়াও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলিম রয়েছে লোয়ার আসামের তিনটি জেলায়।

ক) কামরূপ জেলা ( ৪০% মুসলিম )

খ) নালবাড়ি জেলা ( ৩৫% মুসলিম )

গ) কোকরাঝাড় জেলা ( ২৮% মুসলিম )

সেন্ট্রাল আসামে মোট জেলা ৮ টি। তার মধ্যে তিনটি জেলা মুসলিম অধ্যুষিত।

ক) নওগাঁ (ধর্মীয়ভাবে ৫৫% মুসলিম। জাতিগতভাবে ২৯% বাঙালি এবং ৬৩% অসমীয়া)

খ) মরিগাঁও (ধর্মীয়ভাবে ৫৩% মুসলিম। জাতিগতভাবে ২২% বাঙালি এবং ৭৩% অসমীয়া )

গ) হোজাই ( ধর্মীয়ভাবে ৫৪% মুসলিম)

উত্তর আসামে ৭ টি জেলার মধ্যে মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ জেলা মাত্র একটি।
 
ক) তা হচ্ছে দ্বারাং জেলা (যার ধর্মীয়ভাবে ৬৪% মুসলিম। জাতিগতভাবে ৪৯% বাঙালি এবং ৪৯% অসমীয়া )  

উল্লেখ্য আপার আসামে কোনো মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ জেলা নেই।

অর্থাৎ আসামের ৩২ টা জেলার মধ্যে ১১ টা জেলাই এখন মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ। অচিরেই আসাম মুসলিম প্রধান রাজ্য হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর তাই আসামের মুসলমানদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পথে হাঁটছে সেখানকার প্রশাসন। তাদের মতে আসামের বেশিরভাগ মুসলিম হলো অবৈধ বাংলাদেশী। তবে তাদের এই দাবির পক্ষে কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। 

এনআরসি

অসমীয়া জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি ছিলো, আসামে জনগণনা করা হোক। এতে করে লাখ লাখ অবৈধ বাংলাদেশী মুসলিম চিহ্নিত হবে। অসমীয়াদের মতে, আসামে ৪০ লাখের বেশি অবৈধ মুসলিম বাঙালি রয়েছে।

২০১৯ সালে বিজেপি আসামজুড়ে এনআরসি সম্পাদন করে। এনআরসিতে দেখা যায়, অবৈধ হিসেবে ১৯ লাখ নাগরিকের নাম আসে। যাদের মধ্যে মুসলিম মাত্র ৩ লাখের মতো। অর্থাৎ অসমীয়াদের এতদিনের অবৈধ বাংলাদেশী মুসলিম তত্ত্বটি কার্যত অচল হয়ে পড়ে।

এনআরসিতে বাদ পড়া ৩ লাখ মুসলিম কি অবৈধ?
এ প্রশ্নের এক কথায় সরল উত্তর হচ্ছে, না। আসাম তার জনগণের নাগরিকত্ব যাচাই করার জন্য ১৯৭১ সালের পূর্বের ডকুমেন্ট দেখতে চেয়েছে। আসামের বেশিরভাগ বাঙালি মুসলিম হলো গরীব কৃষক। যারা ব্রহ্মপুত্র নদের চরে বসবাস করে। ব্রহ্মপুত্র নদের বারবার ভাঙনে তাদের ঠিকানাও বদল হয়েছে বহুবার। এইসব গরীব মানুষের পক্ষে এতসব ডকুমেন্ট জোগাড় করা কী আদ্য সম্ভব?

বাংলাদেশেও যমুনা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র নদীর ভাঙনে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়৷ তাদের শেষ আশ্রয়স্থল হয় বিভিন্ন শহরের বস্তিতে। এসব মানুষের থাকে না কোনো স্থায়ী আবাস। ঠিক তেমনি নদী ভাঙনের কবলে পড়ে আসামের চরাঞ্চলের অনেক দরিদ্র মুসলমানের স্থায়ী আবাস বিলীন হয়েছে। অনেককে বরণ করতে হচ্ছে বস্তি জীবন। দুঃখজনক হলেও সত্য সেই সাথে তাদের বরণ করে নিতে হচ্ছে অবৈধ বাংলাদেশীর তকমা কেননা তাদের স্থায়ী আবাস নেই। ক্ষমতাসীনদের ভাষ্য অনেকটা এমন, জীবন বাঁচাবে পরে আগে তাদের রেডি রাখতে হবে শত বছরের সকল কাগজপত্র! যদি কাগজ দেখাতে না পারে তাহলে ধরে নেয়া হবে তারা আসামের বাসিন্দা নয়, তাদের পরিচয় হবে অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী।

আসামের নাগরিকত্ব প্রসঙ্গে বাংলাদেশের স্পষ্ট বক্তব্য!

কেবল ১৯৭১ নয়, ইতিহাস থেকে দেখা যায় ১৯৪৭ সালের পরেই বাংলাদেশ থেকে মুসলিমরা আসামে অনুপ্রবেশ করে নি। কারণ বাংলাদেশের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থা আসাম থেকে বহুগুণ উন্নত।

এছাড়া অবৈধ কেউ তখনই আসতে পারে, যখন বৈধ বাসিন্দারা আশ্রয় দেয়। আসামের মুসলিম বাঙালি জনগণ এমনিতেই গরীব, তাদের পক্ষে নতুন করে অতিথি কে আনয়ন করা সম্ভব পর নয়।

আসামে অবৈধ বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ সম্পর্কে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন: "ভারতের পঞ্চাশ শতাংশ মানুষ এখনো ভালো টয়লেট ব্যবহার করতে পারে না, অথচ বাংলাদেশের নব্বই শতাংশ মানুষ তা করছে। বাংলাদেশের মানুষ এখন আর অনাহারে থাকে না। এখানে এখন মঙ্গাও নেই "

মুসলিম বৃদ্ধির কারণ

আসামে মূলত মুসলমানদের সংখ্যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে উচ্চ জন্মহারের কারণে। আর তা কেবল আসামেই নয়, ভারতের প্রতিটি প্রদেশেই মুসলিম জনসংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর শুধু যে ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিষয়টা তাও নয়। বরং সমগ্র বিশ্বেই মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার তুলনামূলক বেশি। আসাম, পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি বাংলাদেশেও মুসলিমদের সংখ্যা বাড়ছে। এক্ষেত্রে মূলত উচ্চ জন্মহার এবং দাওয়াতী তৎপরতার প্রভাবে মুসলিমদের কলেবর বাড়ছে। তবে এই বাস্তবতা উপেক্ষা করে কাল্পনিক মুসলিম মাইগ্রেশনের ভয়ংকর উপন্যাস রচনা করছে অসমীয়ারা।

আসামের জনগণ কেন অবৈধ বাংলাদেশী তত্ত্বে বিশ্বাস আনছে?

আসামের বাঙালি মুসলিমদের বিরাট অংশ ব্রহ্মপুত্রের চরে বসবাস করে। কিন্তু চর এলাকা অনুন্নত হওয়ায় দিন দিন সেখানে কাজের সুযোগ কমছে। কর্মসংস্থানের আশায় তাই বিরাট সংখ্যক বাঙালি মুসলিম আসামের শহরগুলোতে স্থানান্তর হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে। আর শহুরে সমাজ মনে করছে, এরা অবৈধ বাংলাদেশি। তবে অনুসন্ধান বলে এরা আসলে তাদের দেশেরই চরাঞ্চলের জনগণ।

মুসলিম বৃদ্ধি ও ক্ষমতা হারানোর ভয়!

আসামের সাথে সিলেট থাকার সুবাদে ১৯৩০ এর দশকে আসামের মুসলিম জনগোষ্ঠী অনেক শক্তিশালী ছিলো। আর এর উপর ভর করে আসামের ক্ষমতায় আসে মোহাম্মদ সাদুল্লাহ।

১৯৪৭ এ ভারত ভাগের পর সিলেট হয়ে গেলো বাংলাদেশের। আসামের মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রভাব অনেক কমে এসেছিলো। কিন্তু ৭০ বছর পর উচ্চ জন্মহার, ইসলামের দাওয়াহ প্রসারের কারণে আসাম আবার মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ রাজ্য হওয়ার পথে। আর স্বাভাবিকভাবেই বলা যায় তখন আসামের ক্ষমতায় আসবে মুসলিমরা। এজন্য বর্তমান ক্ষমতাসীনরা আসামকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশ হিসেবে দেখতে ইচ্ছুক নন।

কেন্দ্রীয় সরকারের শোষণকে আড়াল করা!

আসাম ভারতের সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর একটি রাজ্য। আসাম তেল, গ্যাসসহ নানাবিধ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর হলেও ভারতের অনুন্নত রাজ্যগুলোর একটি । আর এর প্রধান কারণ হলো, দিল্লী, গুজরাটি ও মুম্বাইয়ের এলিট শাসকশ্রেণি কর্তৃক সম্পদ লুট।

আসামের জনগণ এই লুটের বিরুদ্ধে অতীতে অনেকবার সোচ্চার হয়েছিলো। আসাম জুড়ে তাই সংগঠিত হয়েছিলো স্বাধীনতার ব্যাপক সংগ্রাম। ভারত সরকার নিষ্ঠুরভাবে এই আন্দোলন দমন করে। ভবিষ্যতে যাতে এসব আন্দোলন আর দানা বাঁধতে না পারে, তাই আসামে প্রয়োগ করা হচ্ছে ডিভাইড অ্যান্ড রুলস পলিসি। অসমীয়া জনগণকে লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে ধর্মীয় বিভেদের দিকে। কারণ দিল্লী গুজরাটের সীমাহীন লুন্ঠন একমাত্র আড়াল করা যায় এই ধর্মীয় উস্কানির দ্বারা। অসমীয়া যতদিন হিন্দু মুসলিম বিভেদ করে নিজেদের মধ্যে ঝগড়ায় লিপ্ত থাকবে, ততদিন কোনোপ্রকার স্বাধীনতার আন্দোলন আসামে সংগঠিত হবে না, এ বিষয়ে নিউ দিল্লী স্পষ্টভাবেই অবগত। আসামের হিন্দু-মুসলিম, বাঙালি-অসমীয়া বিদ্বেষ ও জিঘাংসায় সবচেয়ে বড় সুবিধা পাচ্ছে দিল্লির শাসকগোষ্ঠী এবং গুজরাটের মারোয়ারীরা।

এছাড়া উলফাসহ বিভিন্ন অসমীয়া সংগঠন নানাসময় আসামের স্বাধীনতার দাবিতে সংগ্রাম করেছে। উলফাকে কোণঠাসা করতে দিল্লি আপাত সফল হয়েছে। কিন্তু এরপরেও সুযোগ পেলে উলফাসহ আসামের অন্যান্য স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী আবারো সক্রিয় হতে পারে বলে ভারতীয় গোয়েন্দা এবং রাজনীতিবিদরা ধারণা করছেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন আসামের সাধারণ জনগণের মধ্যে দিল্লির বিরুদ্ধে স্বাধীনতার এই আন্দোলন যাতে কখনোই না উঠে, সেজন্য আসাম জুড়ে খেলা হচ্ছে হিন্দু মুসলিম বিভাজনের টাম্প কার্ড!

আসামে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় অন্যতম কারণ এটাও যে বাঙলার মুসলিম প্রধান রংপুর জেলা এবং সিলেট জেলার একাংশ আসামকে প্রদান করা হয়েছে। ভারত সরকার যদি সেই অঞ্চলের ভূমিপুত্র এই বাঙালি মুসলিমদেরকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে চায়, তাহলে অঞ্চলগুলোও বাংলাদেশের রংপুর ও সিলেট জেলাকে ফিরিয়ে দেয়া উচিত বলে মনে করছেন অনেক বাংলাদেশী। অসমীয়া জাতীয়তাবাদী কর্তৃক বাঙালি মুসলিমকে বহিরাগত হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। অথচ ইতিহাস বলে, অসমীয়ারা নিজেরাও আসামে এসেছে ত্রয়োদশ শতকে চীন থেকে। প্রশ্ন এসে যায় তাহলে তারা কিভাবে ভূমিপুত্র হয়? বাঙালি মুসলিমদের যদি বাংলাদেশে ফেরত যেতে হয়, তাহলে অসমীয়াদেরকেও একই যুক্তিতে চীনে ফেরত পাঠানোর কথা চলে আসে।

আসামের এই কোটি মুসলিম যদি স্বদেশ থেকে বিতাড়িত হয় তাহলে তার ঢেউ এসে পড়বে আসামের পার্শ্ববর্তী মুসলিম রাষ্ট্র বাংলাদেশে। বিপন্ন হবে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও সার্বভৌমত্ব। ভারতের আসামের এনআরসি ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকার মৌখিক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে বাংলাদেশ যদি ভারতের এনআরসি বাস্তবায়ন ‌বন্ধ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে বাংলাদেশ‌কে রোহিঙ্গা সংকটের চেয়ে বৃহত্তর সংকটের মুখোমুখি হতে হবে।

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

কুরবানি, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও বিধান। মুফতি শরীফ মোহাম্মদ সাঈদ

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

লন্ডনে সিম্পল রিজনের অফিস পরিদর্শন করলেন মুফতি সাইফুল ইসলাম

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

লিডসে শায়েখে বাঘা রহঃ-এর জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

লন্ডনের সভায় আলেমরা বি এ এস বি কমপ্লেক্সকে সহযোগিতার আহবান জানালেন।

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

বইঃ বশীর আহমদ শায়খে বাঘা রহঃ

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

বার্মিংহামে শায়েখে বাঘা রহঃ জীবন ও কর্ম শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

বায়রাক্তার টিবি২ দীপ্তিমান করছে তুরস্কের ভাগ্য

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

জার্মানিতে বছরে শতাধিক মসজিদে হামলা; উদ্বিগ্ন মুসলিমরা

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

বুজুর্গ উমেদ খাঁ। চট্টগ্রাম পুনরুদ্ধারের মহানায়ক!

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

ডুরান্ড লাইন! পাক - আফগান দ্বন্দ্বের রেড লাইন!

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

ত্রিপুরা ও বাংলার ঐতিহাসিক সম্পর্ক | পর্ব ২

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

ত্রিপুরার সাথে ইসলাম এবং বাংলাদেশের সহস্র বছরের যোগসূত্রের সন্ধানে!

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

পূর্ব আফ্রিকায় পর্তুগিজ উপনিবেশ স্থাপন, শোষণ ও ফলাফল

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

আফ্রিকার বুকে পর্তুগীজ কলোনি স্থাপনের ইতিহাস।

The Global Affairs - সর্বশেষ সংবাদ ও শিরোনাম

ইউরোপ থেকে ভারতবর্ষের অবিচ্ছিন্ন জলপথ আবিষ্কার।

the global affairs google play logo the global affairs apple logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ হোসাইন আহমদ

info@theglobalaffairs.info